ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চলতি বছর দেশে এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ৫১৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৬২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ঢাকার ৪১৫ জন। ঢাকায় ডেঙ্গুর হটস্পটের শীর্ষে রয়েছে মিরপুর এলাকা। এরপর রয়েছে উত্তরা, মুগদা, কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও বাসাবো এলাকা।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সারা দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সব হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থাপনা, লজিস্টিক, ম্যানপাওয়ার ও স্পেসগুলো তৈরি রাখার কথা বলা হয়েছে। কারণ হাসপাতালগুলোতে ঠিক কি সংখ্যক রোগী আসবে তা তো আগাম বলা যাচ্ছে না। সেজন্য প্রস্তুতিটা আমাদের রাখতে হবে। যাতে কোনো রোগী ফিরে না যায়। আমরা আজ সব বড় বড় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বসেছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মুগদা, মিটফোর্ড, সোহরাওয়ার্দী, কুর্মিটোলা, রাজশাহী, সিলেটসহ বিশেষায়িত, সদর হাসপাতাল নিয়ে বসেছি।
আমাদের আপাতত কোনো চ্যালেঞ্জ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে রোগী আসছে ভালোভাবেই ম্যানেজ করা যাচ্ছে। তবে যদি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তাহলে লজিস্টিক সাপোর্টের প্রস্তুতি রাখতে হবে। কারণ ডেঙ্গু সবসময় জটিল ও ক্রাইসিসের। এটাকে রুটিনভাবে দেখলে হবে না। ব্লাড বা প্লাটিলেটের অভাব যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৪৭, সোহরাওয়ার্দীতে ৯৭, কুর্মিটোলায় ১০০ জন।
অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির বলেন, সরকারি হাসপাতালে যেসব রোগী আছে তা ম্যানেজেবল। আজকে আমরা আবার বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বসবো। যেসব বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে তাদের আমরা এর আগেও ট্রেনিং দিয়েছি, আমরা তাদের একটা গাইডলাইন দেবো। গাইডলাইন মেনেই যাতে তারা রোগী ভর্তি করেন। যাতে অকারণে রোগীকে হয়রানি করা না হয়। ডেঙ্গু চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস হচ্ছে এবার দেখছি হাসপাতালে এসেই খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। যখন রোগী মনে করছে আমি ভালো হয়ে যাচ্ছি। তখনই খারাপের দিকে যাচ্ছে। সবাই কোনো না কোনোভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় রিকভারির দিকে গিয়ে রোগীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে। প্রথম পাঁচদিনে রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু সিজনাল কিছু না। সারা পৃথিবীতেই যেহেতু আরবানাইজেশন হচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণের জন্য যেখানে জন্ম ও বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে ধ্বংস করা দরকার। এটা নিয়ে জনসচেতনতাই বেশি জরুরি।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসার জায়গায় আমরা চিকিৎসা দিতে পারবো দিচ্ছিও, চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে ভালো করতে পারি। কিন্তু ডেঙ্গুর যে বিস্তার সেটা তো অপ্রত্যাশিত। করোনা একটা অদৃশ্য শক্তি। কিন্তু ডেঙ্গু তো চেনা শক্তি। এই মশা কোথায় অবস্থান করে কীভাবে বিস্তার লাভ করে সেটাও জানি। যে কারণে বাসা-বাড়িতে যেন পানি জমে না থাকে। ক্লিন ওয়াটারের কোনো বিকল্প নেই, কোনো পানি জমিয়ে রাখাও যাবে না। আমাদের বাসা-বাড়িতে যদি নিজেরা সচেতন থাকি আর সিটি কর্পোরেশন যদি তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে তাহলে আমরা খুব দ্রুতই স্বস্তির জায়গায় যেতে পারবো।
আমাদের সমন্বয়ের কোনো একটা জায়গায় গ্যাপ হচ্ছে। সেটা আমাদের পূরণ করতে হবে। কারণ সিটি কর্পোরেশন বাইরে কাজ করছে। বাসায় নিজের পরিচ্ছন্নতা নিজেকেই করতে হবে। আরবানাইজেশনের কারণে ডেঙ্গু সারাদেশেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুতরাং সচেতনতার বিকল্প নেই, বলেন অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু সংক্রান্ত উপস্থাপনায় বলা হয়, ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২২ হাজার ৫১৭ জন। যা গত বছর ছিল ২৮ হাজার ৪২৯ জন, ২০২০ সালে ছিল ১৪০৫ জন। তবে সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চলতি বছরের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৬২ জন। ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ৭৭৫ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪১৫ জন। ঢাকার বাইরে ২৩২ জন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু নারীর ৪৬ জন, পুরুষ ২৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭৯ জন, ২০২০ মৃত্যু হয় ৭ জনের। আর ২০২১ সালে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের।