ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের নতুন নাম ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এই ভাইরাসটি এখন থেকে এমপক্স নামে পরিচিত হবে।
মাঙ্কিপক্স নামটি বর্ণবাদী বলে অভিযোগ তুলে দীর্ঘদিন ধরেই নাম পরিবর্তনের দাবি করা হচ্ছিল। এই নামটি আফ্রিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও দাবি করা হয়। অবশেষে ডব্লিউএইচও নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে পৌঁছালো।
ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, এই রোগ এখন এমপক্স নামে পরিচিত হবে। তবে আপাতত সুবিধার জন্য দুটোই ব্যবহার করা হবে। পর্যায়ক্রমে মাঙ্কিপক্স শব্দটি বাদ দেওয়া হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি বিবৃতিতে জানায়, এ বছরের শুরুতে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব প্রসারিত হচ্ছিল, তখন অনলাইনে এবং অন্যান্য মাধ্যমে বর্ণবাদী ও কলঙ্কজনক ভাষা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং এ নিয়ে রিপোর্টও করা হয়। গত অগাস্টে, জাতিসংঘের সংস্থাটি মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের জেরে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পরপরই নাম পরিবর্তনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করা শুরু করে। বিশেষজ্ঞ, দেশ ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার পর এখন এই রোগের নাম এমপক্স রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এই নামটি ইংরেজি ভাষাসহ অন্যান্য ভাষায়ও সহজেই ব্যবহার করা যাবে।
ডব্লিউএইচও’র এ ঘোষণার বিষয়ে মন্তব্য করে, টেরেন্স হিগিন্স ট্রাস্টের সমতা, বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির পরিচালক গ্লেন্দা বন্দে বলেছেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সবার কথা শুনেছে এবং এখন এটি কাজ করছে। কলঙ্ক এবং বৈষম্যকে চিরস্থায়ী করার ক্ষেত্রে ভাষার একটি বড় প্রভাব রয়েছে, এবং এমপক্স ব্যবহারের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে।’
১৯৫৮ সালে বিজ্ঞানীরা এই রোগটি প্রথম শনাক্ত করেন। তারা তখন গবেষণায় বানরদের মধ্যে ‘পক্স-সদৃশ’ রোগের অস্তিত্ব টের পান এবং পরে এটি মাঙ্কিপক্স নামকরণ হয়। মানব শরীরে এর সংক্রমণ ঘটে ১৯৭০ সালে। কঙ্গোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি নয় বছর বয়সী ছেলের শরীরে ঘটে এ সংক্রমণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, প্রতি বছর আফ্রিকার প্রায় ডজনখানেক দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের খবর আসে। বেশির ভাগই কঙ্গোতে, যেখানে বছরে প্রায় ছয় হাজার রোগী শনাক্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়। নাইজেরিয়ায় এ সংখ্যা কমপক্ষে তিন হাজার।
এ বছর যুক্তরাজ্যে এর সংক্রমণ হঠাৎই বেড়ে যায় এবং গত মে মাস থেকে তিন হাজার ৭২০ জন মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। দ্রুত টিকা কার্যক্রম চালু করায় ধনী দেশগুলোতে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেলেও বেশির ভাগই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
জ্বর, গায়ে ব্যথা, আকারে বড় বসন্তের মতো গায়ে গুটি বের হওয়াকে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মাঙ্কিপক্সের একটি রূপ এতটাই ভয়ংকর যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১০ শতাংশ মারাও যেতে পারেন। তবে এ ভাইরাসে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এটি অনেকটা জল বসন্তের ভাইরাসের মতো। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার নিরক্ষীয় বনাঞ্চলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।