ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বর্তমান বছরের ০১ জানুয়ারী থেকে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত আট মাস ১৪ দিনে দেশে নয় হাজার ৮৩৭ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৯ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে এটি এশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় কম বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
এছাড়াও মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত সারাদেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন ও অন্যান্য দপ্তরের কার্যক্রম পর্যালোচনার লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সমবায় মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এডিস বা ডেঙ্গু নিয়ে ২০১৯ সালে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকলেও ২০২০, ২১ ও ২২ সাল এই তিন বছর আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমরা সফলতা অর্জন করেছি। কিন্তু আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। বর্তমানে আবার এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। একইসঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে আমরা এশিয়ার অনেক দেশগুলোর তুলনায় অনেক ভালো আছি।’
অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে কি আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আত্মতুষ্টির বিষয় নয়। এ কারণে আমরা ব্যথিত, দুঃখিত এবং উদ্বিগ্ন, যে কারণে আজকে সভা করা। মানুষের আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যু আমাদের কাছে দুঃখজনক। একজন মানুষেরও মৃত্যু কেন হবে? বিভিন্ন দেশের সাথে তুলনা করার কারণ আমাদের অবস্থান এবং তাদের দেশের অবস্থান জানা। সমস্যা সমাধানে সকল দেশই চেষ্টা করে। আমরাও করছি।’
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছিলেন এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২০১৯ সালের থেকে বেশি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের বিভিন্ন গবেষণা থেকে ধারণা করেছেন। তাদের ধারণা যে সব সময় ঠিক হবে সেটা বলা যাবে না৷ এর আগেও তারা ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন কিন্তু তা ঘটেনি।’
চলতি বছরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার ৯৭০ জন, ভারতে ৩০ হাজার ৬২৭ জন, মালয়েশিয়ায় ৩৩ হাজার, ফিলিপাইনে ৮২ হাজার ৫৯৭ জন, কম্বোডিয়াতে তিন হাজার ৩২২ জন, ভিয়েতনামে এক লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৬ জন, ইন্দোনেশিয়াতে ৬৮ হাজার ৯০৩ জন। আর বাংলাদেশে চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা নয় হাজার ৮৩৭ জন।
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের পর আমরা ক্লাস্টারভিত্তিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর প্রতিটা ওয়ার্ডকে ১০ জোনে ভাগ করে কাউন্সিলরকে প্রধান করে কমিটি করে দিয়েছি। ওইসব এলাকায় কি পরিমাণ মশা নিধনের জন্য ওষুধ লাগবে তা নির্ণয় করে তা আমদানি করা বা মজুদ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনবল সংকটছিলো একদিনে ৩ হাজার জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেখানে ফগার মেশিন ছিল না সেখানে কেনার জন্য তাৎক্ষণিক ভাবে টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মশা নিধনের প্রতিষেধক আমদানিতে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকাতে করোনার থেকে ডেঙ্গু রোগীর আক্রান্তের ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছে যে তথ্য আছে সেটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য। ০১ জানুয়ারি থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নয় হাজার ৮৩৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। তাদের মধ্যে ঢাকা ও কক্সবাজারে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জন করে মোট ৩৪ জন। চট্টগ্রামে একজন ও বরিশালে চার জন ডেঙ্গ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ভারতে ১২ জন, ফিলিপাইনে ৩১৯ জন, ইন্দোনেশিয়াতে ৬৪০ জন, ভিয়েতনামে ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।’
সিটি কর্পোরেশনের সাম্প্রতিক উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনগুলো মানুষের জন্য কল্যাণকর কাজ করে থাকে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই সিটি কর্পোরেশনের কাজ। কোন কাজের মাধ্যমে যদি মানুষ হয়রানির শিকার হয় তা সমাধান করা মেয়রের দায়িত্ব। হকাররা হাঁটা চলার পথ এবং রাস্তার উপরে দোকান বসায় এটা সমর্থনযোগ্য নয়। এ জন্য মেয়রদ্বয় এসব বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন।’
সভায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।