দ্বিতীয় পর্যায়ের গণটিকাদান আজ শনিবার সকালে শুরু হয়েছে। প্রতিটি জেলায় একটি কেন্দ্রে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ কর্মসূচি শুরু করেছে। ঢাকা শহরে কেন্দ্র রয়েছে চারটি। হাতে থাকা টিকা দেওয়া শেষ হলে দেশের ৩ শতাংশ মানুষ আপাতত টিকার আওতায় আসবেন।
ঢাকা জেলায় সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে চারটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেগুলো হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
ইতিমধ্যে নিবন্ধন করা ব্যক্তিরা সিনোফার্মের টিকা পাবেন। এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। তাঁদের মধ্যে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। এই টিকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে সিনোফার্ম বা ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেশে টিকাদান কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায়। কর্মসূচির পরিচালক সামছুল হক বলেন, খুব শিগগির ফাইজারের টিকাও দেওয়া শুরু হবে। তবে তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের নির্দেশনায় ১০ ধরনের মানুষকে চীনের টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে। অধিদপ্তর বলেছে, বাংলাদেশে বসবাসরত সব চীনা নাগরিক এই টিকা পাবেন।
নির্ধারিত টিকাকেন্দ্রে ইতিমধ্যে নিবন্ধন করা ব্যক্তিরা, যাঁরা এখনো কোনো টিকা পাননি, তাঁরা চীনের টিকা পাবেন। টিকা না পাওয়া সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যদের এই টিকা দেওয়া হবে। জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক অনুমোদিত বিদেশগামী বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীরা এই তালিকায় আছেন।
এই টিকার অগ্রাধিকারের তালিকায় আছেন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী এবং সরকারি নার্সিং ও মেডিকেল কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের এই টিকা দেওয়া হবে।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই টিকা পাবেন। প্রকল্পের তালিকায় আছে পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প ও রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প।
এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে জড়িত ব্যক্তিরা সিনোফার্মের এই টিকা পাবেন।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, গণরোগ প্রতিরোধব্যবস্থা বা হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে হলে জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত যে পরিমাণ টিকা পেয়েছে, তাতে ৩ শতাংশ মানুষকে দুই ডোজ করে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছে ৭০ লাখ। একই টিকা উপহার হিসেবে পেয়েছে ৩৩ লাখ। দুই ডোজ করে এই টিকা ৫১ লাখ মানুষকে দেওয়া সম্ভব। তবে বাস্তবে পূর্ণ দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন ৪৩ লাখ মানুষ।
অন্যদিকে, চীনের সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে ১১ লাখ। এই টিকা দুই ডোজ করে সাড়ে ৫ লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে। পাশাপাশি করোনার টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে বাংলাদেশ ফাইজারের টিকা পেয়েছে ১ লাখ। এই টিকার দুই ডোজ করে ৫০ হাজার মানুষকে দেওয়া সম্ভব হবে। সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকা দুই ডোজ করে ৬ লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে।
সব মিলিয়ে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকার দুই ডোজ করে পাচ্ছেন মোট ৪৯ লাখ মানুষ। তাঁরা দেশের জনসংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ।
সুত্র: প্রথম আলো/এমএস