বাজেটে বরাদ্দের অতিরিক্ত আরও ৪ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। জাগো নিউজ টুয়েন্টি ফোরের মাধ্যেম জানা যায়, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ, অসংক্রামক রোগ নিরাময়, ঔষধ, উন্নয়ন খাতের জনবলের বেতন-ভাতার জন্য জিওবি (সরকারি তহবিল) বাবদ বরাদ্দের অতিরিক্ত এ অর্থ চেয়েছে বিভাগটি।
প্রস্তাব অনুযায়ী, অনুমোদিত ও পি/প্রকল্পের (২১টি ওপি ও ২৫টি চলমান প্রকল্প) জন্য মোট ১০ হাজার ৭২৮.৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১৫ হাজার ৩৩১.৫৭ কোটি টাকা এবং অননুমোদিত নতুন ২০টি প্রকল্পের জন্য ১২৯.৮২ কোটি টাকা থাকলেও ৪৭৭.৯৯ কোটি টাকার চাহিদার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। এক্ষেত্রে অনুমোদিত ও পি/প্রকল্পের (২১টি ওপি ও ২৫টি চলমান প্রকল্প) জন্য জিওবি খাতে অতিরিক্ত চাহিদা হিসাবে ৪ হাজার ৬৫২.২৯ কোটি টাকা এবং অননুমোদিত নতুন ২০টি প্রকল্পের জন্য ২৯৯.১০ কোটি টাকাসহ মোট ৪ হাজার ৯৫১.৩৯ কোটি টাকা চেয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
জানা গেছে, সম্প্রতি অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারকে পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে গৃহীত চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচি হেলথ, পপুলেশন ও নিউট্রেশন সেক্টর প্রোগ্রামের (এইচপিএনএসপি) অন্তর্ভুক্ত ২১টি (নতুন ২টি ওপিসহ) অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি) ও ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে এবং ২০টি নতুন প্রকল্প অনুমােদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে।
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে এমটিবিএফের (মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো) আওতায় অর্থ বিভাগ হতে জারিকৃত বাজেট পরিপত্র-১ এর সিলিংয়ের সংস্থান অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিএমসি কর্তৃক উন্নয়ন ব্যয় বাবদ ১০ হাজার ৮৫৮ দশমিক ১৭ কোটি টাকার সিলিং নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগ প্রদত্ত সিলিংয়ের মধ্যে প্রকল্প সাহায্য বাবদ ৭ হাজার ৪৬২.৮৩ কোটি টাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফলে নির্ধারিত সিলিংয়ে উন্নয়ন অংশে জিওবি বাবদ পাওয়া গেছে ৩ হাজার ৩৯৫ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা।
এতে আরও বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উন্নয়ন সিলিং ছিল ৯ হাজার ৯৩৬.৮০ কোটি টাকা, যার মধ্যে জিওবি ৭ হাজার ১৮৬.১১ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ২ হাজার ৭৫০.৬৯ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিশেষ উন্নয়ন সহায়তা থােকসহ উন্নয়ন সিলিং ছিল ১০ হাজার ০৫২.০৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে জিওবি ৭ হাজার ০৮৩.১১ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৩ হাজার ২৬৮.৯৮ কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিপি) অর্থায়নে ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমারজেন্সি অ্যাসিসটেন্টস’ শীর্ষক প্রকল্প স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির আওতায় ভ্যাকসিন ক্রয় বাবদ ৪২৩৬.৪৩ কোটি টাকা (প্রকল্প সাহায্য) বরাদ্দ প্রয়োজন রয়েছে। ফলে প্রকল্প সাহায্যের বরাদ্দ চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, ৪র্থ এইচপিএনএসপিভুক্ত ‘হেলথ অ্যান্ড জেন্ডার সাপোর্ট ইন কক্সবাজার ডিস্ট্রিট (এইচজিএস-সিএক্সবি)’ ও ‘উপজেলা হেলথ কেয়ার (ইউএইচসি)’ শীর্ষক নতুন ২টি ওপি সম্প্রতি অনুমোদিত হয়েছে।
অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চিঠিতে বলা হয়, অনুমোদিত ৪র্থ সেক্টর কর্মসূচি এইচপিএনএসপিভুক্ত অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, ইপিআই, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ নিরাময়-নিয়ন্ত্রণ, ডায়েট, এমএসআর, ঔষধ এবং উন্নয়ন খাতে নিয়োজিত জনবলের (সিএইচসিপিসহ) বেতন-ভাতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। উল্লিখিত, এসব কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়ন এবং চলমান অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সিলিংয়ের আওতায় প্রদত্ত জিওবি বরাদ্দের অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন।
আগামী অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ১১টি প্রকল্পের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিতকরণসহ চলমান অগ্রাধিকার প্রকল্প-অপারেশনাল প্ল্যানগুলোর অনুকূলে ন্যূনতম বরাদ্দ নিশ্চিত করা জরুরি। এ অবস্থায়, সিলিংয়ে প্রদত্ত জিওবি বাবদ বরাদ্দের অতিরিক্ত ৪ হাজার ৬৫১.৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন।
চিঠিতে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিমিত্ত বাস্তবায়নাধীন ৪র্থ সেক্টর কর্মসূচির পরিকল্পিত কার্যক্রম ও অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের এমটিবিএফের আওতায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উন্নয়ন ব্যয়ের সিলিং ১০ হাজার ৮৫৮.১৭ কোটি টাকার অতিরিক্ত জিওবি বাবদ ৪ হাজার ৯৫১.৩৯ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে মোট ১৫ হাজার ৮০৯.৫৬ কোটি টাকায় পুননির্ধারণের বিষয়ে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ চেয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব।