ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: রোগীদের স্বজনরা জানান, তারা ওষুধের দোকানে গিয়ে স্যালাইন পাচ্ছেন না। দুয়েকটা মিললেও গুনতে হচ্ছে দুই থেকে তিনগুণ বেশি টাকা। স্যালাইনের পণ্যের গায়ে মূল্য ৯০-৯৫ টাকা লেখা থাকলেও এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে ফেলেছে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বজনের জন্য স্যালাইন কিনতে ‘শাহাদাৎ ফার্মেসি’তে যান জাহানারা বেগম। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় কর্মীরা জানান স্যালাইন নেই। কিছুক্ষণ পর একটি বিশেষ স্লিপ হাতে সেই ফার্মেসিতে আসেন আরেক স্বজন মোরশেদ। তবে এবার ঠিকই স্যালাইন পেলেন ওই ব্যক্তি। ঘটনাটি বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটক সংলগ্ন এলাকার।
এ বিষয়ে জানতে ওই ফার্মেসির ম্যানেজার অরুপ ঘোষের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। শুরুতে তিনিও ফার্মেসিতে স্যালাইন থাকার কথা অস্বীকার করেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, ‘স্যালাইন আছে, তবে কোয়ান্টিটি এমাউন্ট ছাড়া বিক্রি করা হয় না।’
এভাবেই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সুযোগ নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য জরুরি ডেক্সট্রোজ নরমাল স্যালাইনের (ডিএনএস) কৃত্রিম সংকট তৈরী করছেন ফার্মেসি মালিক ও ওষুধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা।
বুধবার চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ, চকবাজার ও কাজী দেউড়ি এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে অন্তত ২০ ফার্মেসির কোনোটিতে ডিএনএস স্যালাইন পাওয়া যায়নি। শহরের অন্যান্য এলাকার ফার্মেসিগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ডিএনএস স্যালাইন। স্যালাইনের পণ্যের গায়ে মূল্য ৯০-৯৫ টাকা লেখা থাকলেও এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে ফেলেছে।
চকবাজার এলাকায় ১০ বছর বয়সী ছেলের জন্য স্যালাইন কিনতে এসে বিপাকে পড়তে দেখা যায় ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলামকে। তিনি বলেন, ‘মেডিকেল এলাকার অনেক ফার্মেসি ঘুরে স্যালাইন না পেয়ে চকবাজারে আসলাম। ৯০ টাকার স্যালাইন ৩০০ টাকা করে ৬০০ টাকা দিয়ে দুটি স্যালাইন কিনেছি।’
বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতাল, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা স্বজনরা জানান, তারা ওষুধের দোকানে গিয়ে স্যালাইন পাচ্ছেন না। দুয়েকটা মিললেও গুনতে হচ্ছে দুই থেকে তিনগুণ বেশি টাকা। ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এই স্যালাইন।
মেহেদিবাগ এলাকার আল-মদিনা ফার্মেসীর বিক্রয় প্রতিনিধি রিয়াদ হাসান বলেন, ‘বেক্সিমকো, বায়োফার্মা, পপুলার, লিব্রাসহ প্রায় ওষুধ কোম্পানীই ডিএনএস স্যালাইন সরবরাহ করে। স্বাভাবিক সময়ে একেকটি ফার্মেসিতে এ স্যালাইনের চাহিদা থাকে ১০ থেকে ১২টি। কিন্তু বর্তমানে চাহিদা বেড়ে ৩০ থেকে ৫০টি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বাড়লেও ওষুধ কোম্পানীগুলো সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘চাহিদা বৃদ্ধির পরও আমরা রোগীদের প্রথম তিন থেকে চারটি স্যালাইন হাসপাতাল থেকেই দিচ্ছি। এরপরও অতিরিক্ত চাহিদা ও প্রাইভেট হাসপাতালের রোগীদের চাপ বাজারে পড়ছে।’
বিষয়টি স্বীকার করে নগরের মেট্রোপলিটন হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘স্যালাইন আমাদের কাছেও নেই। তাই বাড়তি দামে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।’
এদিকে, স্যালাইনের দাম বৃদ্ধির খবর পেয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি ওষুধের বাজার হাজারী গলিতে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ম্যাজিস্ট্রেট আসার খবরে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। এ সময় হাজারী গলির খাজা মার্কেটের একটি দোকান থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ফিজিশিয়ান স্যাম্পল জব্দ করা হয়।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘বাজারে আসলেই ডিএনএস স্যালাইনের সংকট রয়েছে। আমরা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিব স্যারের সঙ্গে কথা বলব। বাজারে স্যালাইনের সাপ্লাই স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকবে।’
চট্টগ্রামে চলতি বছর এখন পর্যন্ত (বুধবার) দুই হাজার ২৪১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই সময়ে মারা গেছেন ২৩ জন; যার মধ্যে ১০ জনই শিশু। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৭৮ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সৌজন্যে, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।