ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চাহিদার তুলনায় সরবরাহ না থাকায় রাজধানীর ছোট থেকে বড় সব ধরনের ফার্মেসিতে চলছে তীব্র স্যালাইন সংকট। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের আশেপাশের ফার্মেসিগুলোতে স্যালাইন সংকটের চিত্র পাওয়া গেছে।
অসাধু সিন্ডিকেট এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, দেশে স্যালাইনের ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন দেশে উৎপাদন হচ্ছে এবং বিদেশ থেকেও আমদানি করা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল সংলগ্ন কাজী ফার্মেসিতে দুটি স্যালাইন কিনতে এসে একটি স্যালাইন নিয়ে যাওয়ার সময় নজরুল ইসলাম নামে একজনের সঙ্গে কথা হয়। রোগীর প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে তিনি বলেন, ডাক্তার বলেছেন, আমার রোগীর স্যালাইন চলবে। কিন্তু আমাকে একটার বেশি স্যালাইন দিল না, এখন আবার একটু পরে অন্য কাউকে পাঠিয়ে আরেক ব্যাগ স্যালাইন কেনার চেষ্টা করতে হবে।
বিভিন্ন ফার্মেসির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই থেকে তিন মাস ধরে চলছে সব ধরনের স্যালাইনের তীব্র সংকট। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছে স্যালাইনের অর্ডার করেও পাওয়া যায় না। আবার স্যালাইন পাওয়া গেলেও সেটা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম।
স্যালাইনের সরবরাহ ঠিক আছে কি না জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের উল্টোপাশের সানমুন ফার্মার এক বিক্রেতা জানান, দুই-তিন মাস ধরে স্যালাইনের সংকট চলছে। অনেকেই স্যালাইন কিনতে আসে, তবে আমাদের কাছে না থাকায় দিতে পারি না।
আল মদিনা ফার্মেসির একজন বিক্রেতা বলেন, ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই স্যালাইন ঠিকমতো পাই না। কোম্পানির লোকেরা মাঝে মাঝে ১০/১২ ব্যাগ দেয়, যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম।
রহমান ফার্মার বিক্রেতা রিয়াদ বলেন, আমাদের স্যালাইন থাকলে সারা দিনে প্রায় ৪০/৫০ ব্যাগ বিক্রি হয়। তবে আমরা চাহিদা মোতাবেক স্যালাইন পাচ্ছি না। প্রায় দুই মাস ধরে এই সমস্যা।
বাংলাদেশ ফার্মার সালমান বলেন, আমাদের প্রতিদিন একশোর উপরে স্যালাইনের চাহিদা। তবে আমরা কোম্পানি থেকে পাই ১/২ কার্টুন, নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। অনেককেই স্যালাইন কিনতে এলেও আমরা স্যালাইন দিতে পারি না।
চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এবার অনেক বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কারণে স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট কারসাজি ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে স্যালাইন।
রাজধানীর পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানতে পেরেছি, বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় পরিমাণে স্যালাইন উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু রোগীর স্বজনরা কিনতে গেলে স্যালাইন পান না। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, একটি সিন্ডিকেট চক্রান্ত করে স্যালাইনের সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, স্যালাইনের দাম কমানোর জন্য প্রথম কাজ হবে এই সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলা, দমন করা। কর্তৃপক্ষের উচিত স্যালাইন সহজলভ্য করা। পাশাপাশি স্যালাইন উৎপাদকদের সঙ্গে এই বিষয়ে জরুরি ভাবে আলোচনা করা।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নূরুল আলম বলেন, কিছুদিন আগে স্যালাইনের যে সংকট ছিল, সেটা এখন কেটে গেছে। এখন স্যালাইনের কোনো সংকট নেই। আমাদের স্থানীয় উৎপাদন আছে প্রতিদিন এক লাখ ৯০ হাজার ব্যাগ। পাশাপাশি ২০ লাখ ব্যাগ আমদানি করা হয়েছে। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি করলে আইনে তাকে তাৎক্ষণিক দুই লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান আছে।
তিনি আরও বলেন, এখন ডেঙ্গু রোগীও কমেছে, স্থানীয় উৎপাদন এবং আমদানি মিলে স্যালাইনের সংকট থাকার কথা নয়। তারপরও কৃত্রিম সংকট কিংবা কারও কারসাজি থাকলে সবার সহযোগিতা চাই। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এই বিষয়ে সোচ্চার আছে। স্যালাইনের মার্কেট হচ্ছে হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর স্যালাইন সাপ্লাই আছে। সরকারি সমস্ত হাসপাতালে যথেষ্ট পরিমাণে সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারি কোনো হাসপাতালে স্যালাইনের ঘাটতি নেই। বরং এক মাসের বেশি মজুদ আছে।
নূরুল আলম বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বেশ কিছু কাজ করেছি। উৎপাদকদের সঙ্গে বসে তাদের ডেলিভারি সিস্টেম আমরা রিসিডিউল করে দিয়েছি। দেখা যাচ্ছে, একই এলাকায় ছয়টা কোম্পানির মধ্যে তিনটা কোম্পানি স্যালাইন সাপ্লাই দিচ্ছে, আবার কোনো জায়গায় কেউ সাপ্লাই দিচ্ছে না। এর ফলে কোনো জায়গায় স্যালাইন বেশি সাপ্লাই হচ্ছে, আরেক জায়গায় স্যালাইন পাচ্ছে না। আমরা বলেছি না, এভাবে করা যাবে না। একদিন এক কোম্পানি এক এলাকায় সাপ্লাই করতে হবে। এটার সুফল আমরা পেয়েছি।