নীলফামারীর সৈয়দপুরে অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করায় ফাইলেরিয়া অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাবটি সিলগালা করা হয়েছে।
উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটিতে বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে খোঁজ নিয়ে আমরা জানতে পারি যে এ ফাইলেরিয়া হাসপাতালের কোনো অনুমোদন নেই। এছাড়া এ হাসপাতালে নিয়মিত কোনো চিকিৎসক, নার্স, টেকিনেশিয়ান কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী থাকে না। যেসব সুবিধা থাকা দরকার, সেগুলোর কিছুই নেই। তাই হাসপাতালটি সিলগালা করা হয়েছে।
অভিযানের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশার ও সৈয়দপুর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. আলতাফ হোসেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলাসহ ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ফাইলেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এ রোগের চিকিৎসার জন্য ২০০২ সালে জাপান সরকারের অর্থায়নে ধলাগাছ এলাকায় যাত্রা শুরু করে ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইম্যুনোলজি (আইএসিআইবি) হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে ছিল।
হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রকল্প পরিচালক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন ওই সময় স্থানীয় ভাবে ১৮ জন দেশি-বিদেশি চিকিৎসককে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। জাপান, কানাডা ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় দুটি বহুতল ভবন নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। জাপান ও অন্যান্য দেশ থেকেও গবেষণা কর্মীরা আসেন এখানে। তবে ২০১২ সালে হাসপাতালটিকে ঘিরে স্থানীয় ভাবে সংকট সৃষ্টি হয়। পরিচালনা কমিটির দ্বন্দ্বে ভেঙে পড়ে সেবা কার্যক্রম। মুখ ফিরিয়ে নেয় দাতা সংস্থাগুলো।
২০২১ সালের ০৩ অক্টোবর সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে টোকেন মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার প্রত্যয়ে হাসপাতালটি নতুন করে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান আইএসিআইবির সঙ্গে ভুয়া চুক্তিনামা দেখিয়ে এর কার্যক্রম শুরু করে। এরপর বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন করে ১০১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ সময় চাকরি প্রত্যাশী প্রত্যেকের কাছ থেকে ফেরতযোগ্য জামানতের কথা বলে নেওয়া হয় ৫০ হাজার থেকে চার লাখ করে টাকা। এরপর নিয়োগপ্রাপ্তরা বেতন-ভাতা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। কিন্তু গত ২৬ মে প্রতিষ্ঠানটি পত্রিকায় আবার ২৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় প্রতারণার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে।