ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: ‘মানুষ যখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকে তখন আল্লাহ’র পরে জীবন বাঁচাতে চেষ্টা চালিয়ে যান চিকিৎসকরা। আর সেই চিকিৎসকরাই নিজেদের স্বার্থে রোগীদে জিম্মি করে, তারা কেমন চিকিৎসক।’
অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর শান্তিনগর মোড়ে বেসরকারি পুপলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন।
মো. মাগফুর রহমান নামের ওই ব্যক্তি ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে পুপলারে ব্যক্তিগত চেম্বার করে রোগী দেখেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাদের দাবি আদায়ে ধর্মঘট দেওয়ায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া বন্ধ রেখেছেন। আমার রোগীকে এনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরও কাউকে পেলাম না। এতো কষ্ট করে আসলাম অথচ ডাক্তার না দেখায়ে চলে যাচ্ছি।’
ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের এমন হওয়া উচিৎ নয়। রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায় করা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারা কি দেশের প্রচলিত আইনের বাইরে?’
জানা গেছে, রাজধানীর ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ডা. মুনা সাহা ও ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানার মুক্তির দাবিতে সোমবার ও মঙ্গলবার সারাদেশে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। এ কারণে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা ও অপারেশন করছেন না ডাক্তাররা। এতে বেসরকারি হাসপাতালের বেশির ভাগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস ও অপারেশন বন্ধের কর্মসূচিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশের সব বেসরকারি হাসপাতালের কার্যক্রম। এতে রোগীদের ভোগান্তিও চরমে পৌঁছেছে।
রাজধানীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে সেবা না পেয়ে পড়ছেন বিপাকে। অনেকেই অন্যান্য হাসপাতালে গিয়েও দেখেন একই অবস্থা। শেষমেষ ফিরে গেছেন বহু রোগী।
জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সার্জারির রোগীরা। কারণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনও করছেন না চিকিৎসকরা। এমনকি ডাক্তারের অভাবে বহু হাসপাতালে জরুরি টেস্টও হচ্ছে না।
শুধু রাজধানীতে নয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা নিতে আসার রোগীরা।
এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায় করাকে অমানবিক বলছে সংগঠনটি।
ক্যাব চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, চিকিৎসক হোক আর যাই হোক সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইনী ভাবে মোকাবেলা করা উচিৎ। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে হীন ষড়যন্ত্রে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া জনগণের চিকিৎসা সেবার মতো মৌলিক অধিকার খর্ব করার সামিল। যা শুধুমাত্র নিন্দনীয় নয় এটা চরম বর্বরতার সামিল এবং আদিমযুগে ‘জোর যার মল্লুক তার’ সে স্লোগানে প্রত্যাবর্তনের আহ্বান। এটা অনেকটা লাশের রাজনীতির মতো।
তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাজধানীর সেন্ট্রাল হসপিটালের দুই চিকিৎসক ডা. মুনা সাহা ও ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানার জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত তাদের জামিন দেন।
দুই চিকিৎসকের জামিন হওয়ায় চলমান ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। এ জন্য মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকেই প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন আবার চালুর ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব সার্জন বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম।
তিনি বলেন, সর্বশেষ খবর পেয়েছি- গ্রেপ্তার হওয়া দুই চিকিৎসকের জামিন হয়েছে। তাই আপাতত চিকিৎসকদের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। ফলে আজ বিকেল থেকে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন চলবে।
গত ১০ জুন বিকেলে সেন্ট্রাল হসপিটালে আঁখির নবজাতক সন্তান মারা যায়। ১৮ জুন দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাহবুবা রহমান আঁখিও। এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী ধানমন্ডি থানায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সেন্ট্রাল হসপিটালের ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর ১৫ জুন রাতে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা সাহাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
-এসআর