ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: এডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সম্প্রতি ভোক্তাকণ্ঠকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি, ভোক্তাদের অধিকার ও ভোক্তা-অধিকার আইন নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ রিয়াল।
ভোক্তা ও পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
ভোক্তাকণ্ঠ: ঈদের আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সকল পণ্যের দাম বেড়েছে, এই বাড়তি দাম কি যৌক্তিক না কি ব্যবসায়ীদের কারসাজি?
হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া: পণ্য মূল্য তো আগেই বেড়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে বাড়ছে। আমরা যদি পেঁয়াজ ও চিনির কথা বলি, সরকার কিন্তু ট্যাক্স অনেক ছাড় দিয়েছে। সুতরাং এই ছাড় দেওয়ার পরে চিনি, পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কিছুদিন আগে আমরা দেখলাম ৫৮০ টাকার জিরা এখন ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা শুধুমাত্র অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি। আমরা এটার কোনো যৌক্তিক কারণ দেখি না। অযৌক্তিক ভাবে এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মসলার ক্ষেত্রে এখন চলছে কারসাজি।
এছাড়া পেঁয়াজ, চিনি, গরুর মাংসে এমন কারসাজি চলছে। ভারতে গরুর মাংস ২৪০ রুপি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আমরা সরকারকে বলছি এক লক্ষ গরু ভারত থেকে আমদানি করতে। তাহলে এই গরুর মাংসের কেজি ৫০০ টাকার উপরে উঠবে না। অথচ এখন যদি কোরবানির জন্য কিনে আনি তবে এক হাজার টাকা কেজি পড়বে গরুর মাংসের দাম। তাহলে এটার তো কোনো যুক্তি নেই। অযৌক্তিক ভাবে, অন্যায্য ভাবে লুন্ঠুণমূলক ভাবে দাম বাড়িয়েছে। বিশেষ করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী, তারা মুজদ করছে, সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছি।
আবার ভালো ব্যবসায়ীও আছে। আমরা তো চাই তারা ব্যবসা করুক। কিন্তু আমাদের এখানে ভালো ব্যবসায়ী নেই। এই দাম বাড়ানোটা ভোক্তাদের উপর গোঁদের উপর ফোরার ঘা এর মতো। সরকার চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ সরকারি দামে কোথাও চিনি পাবেন না। ভারতে পেঁয়াজের দাম আমাদের টাকাতে ১৮ টাকার উপর পরে না। ওদের পেঁয়াজ অনেক বড়। অথচ আমাদের দেশে পেঁয়াজের দাম অনেক। এভাবে যদি আমাদের লুট করা হয় তাহলে ভোক্তারা যাবে কোথায়? আমরা মনে করি মসলার, পেঁয়াজ, চিনির দামসহ সকল পণ্যে দাম ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে বাড়িয়ে দিয়েছে।
এছাড়া, সবজির বাজারও চড়া। এখন আপনি বাজারে গিয়ে দেখবেন ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাবেন না। এটা তো হতে পারে না। রাজশাহী থেকে ঢাকায় সবজি আসতে সব খরচসহ পড়ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অথচ ঢাকায় অনেক দাম। বাজারের এই অবস্থা একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরই সঠিক ভাবে মনিটরিং করছে। বাকি সব যারা আছে যেমন- বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, প্রতিযোগীতা কমিশনের বাজারে কোনো কাযক্রম নেই। তাছাড়া ডিসি অফিস থেকে যেভাবে মনিটরিং করার কথা সেভাবে করা হচ্ছে না। তারা কিছু কিছু করছে। তবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে যে আইন করা হয়েছে সেই আইনের দৃশ্যমান কোনো বাস্তবায়ন নেই। তাদের লোকবল নেই, এছাড়াও তাদের নানা সমস্যা। অফিস বসে বসে কাজ করেন কিন্তু ফিল্ডে দৃশ্যমান কোনো অভিযানও নেই। তারা যে কি কাজ করে সেটাই আমরা বুঝতে পারছি না।
ভোক্তাকণ্ঠ: কিছু ব্যবসায়ী আছে সুযোগ পেলেই দাম বাড়িয়ে দেয়, তাদের থামানো যাচ্ছে না কেন?
হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া: এটা থামানো যাচ্ছে না। বিশ্ব বাজারেও পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু আমাদের এখানে ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। সরকারের বাজার তদারকিটা আরও বৃদ্ধি করার প্রয়োজন আছে। সরকার যদি বাজার তদারকি বৃদ্ধি করে তাহলে আমরা বিশ্বাস করি বাজারে যে পর্যায়ে পণ্যের দাম আছে এই পর্যায়ে থাকবে না। আরও কমে আসবে। আর এটা যদি সরকার তদারকি না করে তাহলে যা আছে তার থেকে আরও বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং আমরা আশঙ্কা করছি যে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাটা রয়ে গেছে। সুতরাং যেকোনো পরিস্থিতিতে হোক সরকারের উচিৎ বাজার মনিটরিং করা। সবগুলো এজেন্সিকে বাজারে পাঠানোর দরকার আছে।
একে তো আমরা ভেজাল খাচ্ছি, তার পরে আবার পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি। প্রান্তিক পযায়ে যারা ভোক্তা এবং নিম্ন আয়ের ভোক্তারা খুব কষ্টে আছেন। এই ভোক্তার কষ্টের কারণে কিন্তু সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে। সরকারের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা সরকারের ক্ষতি করতে চায়। তারা সরকারকে উল্টো ভাবে বোঝাচ্ছে। যার জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এটার জন্য সরকারের যে এজেন্সিগুলো আছে তাদের বাজারে গিয়ে অভিযান চালাতে হবে। অভিযান মানে অন্যায় ভাবে কারো উপর নিযাতন করুক সেটা আমরা চাই না। আমরা চাই যারা কারসাজি করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।
কনজুমারস আইন আছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইন আছে, প্রতিযোগীতা কমিশনের আইন আছে, এই আইনগুলো একটিভ করার প্রয়োজন আছে। আমরা যে আইনের জন্য আন্দোলন করলাম সেই আইন যদি এখন একটিভ না হয় তাহলে তো এটার ফলাফল ভোক্তাদের কাছে পৌঁছালো না। ভোক্তা স্বার্থে নির্বাচনের বছর হলেও সরকারের নিজের স্বার্থে হলেও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। প্রয়োজনবোধে সরকার যে এক কোটি কার্ড দিচ্ছে, এটার আওতা আরও বাড়ানো যায় কি না সে দিকে সরকারের চিন্তা করার দরকার আছে।
ভোক্তাকণ্ঠ: অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে আপনার মতে কি করা প্রয়োজন?
হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া: সরকার অসময়ে গিয়ে আমাদের কথা শোনে। যখন শোনে তখন আর সময় থাকে না। সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না কেন? সরকারের হাত অনেক শক্তিশালী। সরকার অবশ্যই পারে। ভাঙছে না কেন? এখানে সরকারের মাঝেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা আছে। যারা মেধাবী অসাধু কর্মকর্তা। তাদের এই মেধার কারণেই তারা এই সিন্ডিকেট ভাঙে না। সরকার ইচ্ছে করলেই এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারে বলে আমরা মনে করি। আমাদের চিনি কলগুলোকে ধ্বংস করে ফেলছে। এই কর্মকর্তারাই এগুলো ধ্বংস করছে। কৃষক আখ বিক্রি করতে এলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করতে হয়। এরপর বছরের পর বছর টাকা দেয় না। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে এখন তারা আর আখ চাষ করতে উৎসাহ পাচ্ছে না। এটা তো সরকারের ওই কর্মকর্তারাই, যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারাই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আতাত করে এগুলোকে ধ্বংস করেছে। সর্বক্ষেত্রে এই অবস্থা করা হয়েছে।
সরকার পারে না যে তা না, সরকার পারে। তবে আমাদের একটা অনুরোধ থাকবে যে, টিসিবিকে আরও শক্তিশালী করা দরকার। সরকারের কাছে কিছু পণ্য থাকা দরকার আছে। সেই পণ্য যদি সরকারের কাছে থাকে তাহলে তারা যে ব্ল্যাকমেইল টা করার চেষ্টা করছে এই ব্ল্যাকমেইল আর করতে পারবে না। আর একটা বিষয় আমরা মনে করে, এলসি খোলার ক্ষেত্র সবার জন্য ওপেন করে দেওয়া উচিৎ। কেন এটাকে আমরা কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবো? ছয়-সাতটা কোম্পানি ছাড়া আর কেউ আমদানি করতে পারছে না। সুতরাং সরকারের উচিৎ যারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছে, যারা এসব পণ্য নিয়ে ব্যবসা করে তাদেরকে সরকারের সাহায্য করার। সরকারের ইনসেন্টিভ তাদের দেওয়ার আছে। তারা যেন পণ্যটি এলসি করে আনতে পারে। বাজারে পণ্যের প্রতিযোগীতা তৈরি হলে অবশ্যই জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে বলে আমরা ক্যাবের পক্ষ থেকে মনে করি।
ভোক্তাকণ্ঠ: সাধারণ ভোক্তারা অভিযোগ করেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলো ছোট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান করে মূল জায়গায় যেতে পারে না। এই অভিযোগের বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া: ছোট ছোট যেসব ব্যবসায়ী আছেন তারাও কিন্তু এক ধরনের সিন্ডিকেট। দেখবেন তারা নিজেরা নিজেরা একটা সিন্ডিকেট করে ফেলছে। তারা পাইকারি বাজার থেকে যেভাবে কিনে আনে সেভাবে খুচরা বাজারে বিক্রি করছে না। ভোক্তা-অধিকার যে শুধু খুচরা বাজারে যাচ্ছে তা নয়, বড় বড় প্রতিষ্ঠান, পাইকারি বাজারেও যাচ্ছে। বড় বড় সুগার মিলগুলোতে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। যেমন মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপে অভিযানে গেছেন। ভোক্তা অধিদপ্তরে এখন যে ডিজি (মহাপরিচালক) আছেন তিনি একজন সাহসী মানুষ, দেশপ্রেমী মানুষ। তিনি এই অভিযানগুলো করে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পৌঁছেছেন। কিন্তু কতটুকু কার্যকর করতে পেরেছেন সেটা পরের ব্যাপার। কিন্তু তিনি ওই পর্যন্ত গেছেন এবং এই ব্যাপারে তিনি মন্ত্রণালয়কে লিখেছেন। যে ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান সারাদেশকে জিম্মি অবস্থায় রেখেছে।
ভোক্তাকণ্ঠ: জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভোক্তাদের অধিকার কতটুকু সংরক্ষণ করছে বলে মনে করেন?
হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া: ভোক্তা অধিদপ্তরেরও কিছু লিমিটেশন আছে। আমরা ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণণালয়ের অধিনে দুটি ডিভিশন দাবি করেছি। ব্যবসা-বাণিজ্য একটা ডিভিশন দেখবে, কনজুমারস রাইটস আরেকটি ডিভিশন দেখবে। পাশের দেশে কিন্তু কনজুমারস মন্ত্রণালয় আছে। আরেকটা মন্ত্রণালয় আমরা যাচ্ছি না, আমরা বলছি যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধিনেই দুটি ডিভিশন করা হোক। ডিভিশনের যারা কনজুমারস নিয়ে কাজ করবে তারা সরাসরি ভোক্তা-অধিকারের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ভোক্তা অধিদপ্তর যে কাজটা করছে তাদের কাজ প্রশংসনীয়। কিন্তু এটা লিমিডেট হয়ে গেছে। এতো কাজ। আমাদের এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে কারসাজি হচ্ছে না। সুতরাং এক ভোক্তা অধিদপ্তর দিয়ে হচ্ছে না। আমরা ক্যাব থেকে সহযোগীতা করতে যাচ্ছি। আর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যদি শুধু অফিসে বসে সার্ভে করেন তাহলে তো আর কাজটা হবে না। বাজারেও তাদের যাওয়া দরকার আছে। সবারই যাওয়া দারকার। কিন্তু সবাই যাচ্ছে না। তা না হলে বাজারে গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে কিভাবে? বাজারে মাছের দামও বেড়েছে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আছে, বাজারে তাদের কোনো কাজ নেই। তারা রোজার মাসে কিছু গরুর মাংস আর দুধ বিক্রি করেছে। তাদের প্রত্যক্ষ ভাবে বাজারে অভিযানে যাওয়ার দরকার আছে। যেটুকু লোকবল আছে সেটুকুও তো তারা ব্যবহার করে না বলেই ভোক্তা আজকে এতো কষ্টের মধ্যে আছে।
ভোক্তাকণ্ঠ: ভোক্তা-অধিকার আইন ২০০৯, ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় কতটুকু কার্যকর? এই আইনের কি কি পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন।
হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া: এই আইনের কিছু কিছু দুর্বলতা আছে। ওইগুলো আমরা বলেছি। এটা নিয়ে ইতোমধ্যেই সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। সংশোধনীটা পাশ হয়ে এলে এই আইন আরও বেশি শক্তিশালী হবে। এটা একটা ভালো আইন। এবং আমরা যে সচেতনতার কথা বলছি কিন্তু সচেতন তো হচ্ছে না। আইনের আওতায় না আনলে সচেতনতা বাড়বে না। একটা কথা আছে, ‘চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী।’ তাদের বেলাতেও তাই হয়েছে। আমরা বলি তারা ব্যবসা করবে কিন্তু তারা তো আমাদের উপর ব্যবসা করছে না। তারা আমাদের উপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মত করছে। তারা আমাদের দেশের লোক নয়, তারা টাকা পাচার করে, আন্ডার ইনভয়েস যারা করে তারা বাংলাদেশের লোক না। তারা নামে বাঙ্গালী। তারা আমাদের ভোক্তাদের কষ্ট দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের যথেষ্ট পরিমাণ অনুরোধ করেছেন। আপনারা ভোক্তাদের দিকে একটু তাকান। কিন্তু তারা তাকায় না। তারা শুধু তাদের ব্যবসাটাই বোঝে। এবং এখানে আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন। শক্ত ভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
ভোক্তা অধিদপ্তর আছে কিন্তু যেভাবে তাদেরকে আইনের আওতায় নেওয়া দরকার, এখন পর্যন্ত ভোক্তা অধিদপ্তর খুব একটা মামলা তাদের বিরুদ্ধে করতে পারেনি। এই সামান্য বাজারে গিয়ে জরিমানা করে। আমরা মনে করি ভোক্তাদের স্বার্থে তাদেরকে কঠোর হতে হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগটা হতে হবে। সঠিক প্রয়োগ তারা করছেন না। ভোক্তা অধিদপ্তর আইনের সঠিক প্রয়োগ করুক। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরও কাজ করছে। সারাদেশেই তাদের লোকবল আছে, আমাদের নেতৃবৃন্দরাও তাদের সহযোগীতা করছে। কিন্তু তাদেরকে আরও একটিভ হতে হবে।
ভোক্তা অধিদপ্তর যে বাজারে যায় এটা কিন্তু ছোট ব্যবসায়ীরা চায় না। যেখানে ভেজাল পাওয়া যাবে সেখানেই কিন্তু আমাদের যাওয়ার কথা আছে। দোকানে দোকানে মূল্য তালিকা থাকে না। ভোক্তা অধিদপ্তর যখন যায় তখন একটা মূল্য তালিকা দেখায়ে দেয় যখন চলে আসে তখন মূল্য তালিকা রেখে দেয়, টানানো থাকে না। ছোট, বড় আর কর্পোরেট ব্যবসায়ীর কথাই বলেন না কেন ভালো ব্যবসায়ীও যেমন আছে তেমন খারাপ ব্যবসায়ীও আছে। তবে খারাপ ব্যবসায়ীর সংখ্যা একটু বেশি। একজন দেখছে অন্যায় ভাবে ব্যবসা করার পরেও তারা ধরা পড়ছে না, শাস্তি পাচ্ছে না। তাহলে আমিও করি। এই রকম অবস্থা চলছে।
ভোক্তাকণ্ঠ: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কি করা উচিত বলে মনে করছেন?
হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া: মূল্যস্ফীতি আমাদের দেশে সর্বোচ্চ পযায়ে চলে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পণ্যের মূল্য নির্ধারিত হয়ে সহনীয় পযায়ে না আসবে ততক্ষণ পযন্ত মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে আমরা মনে করি না। হ্যাঁ সরকার বলছে সামনে দিকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে যদি পণ্যের দাম কমে যায়। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোটাও তো এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে।
ভোক্তাকণ্ঠ: ভোক্তাদের সচেতন করতে যদি আপনার কোনো পরামর্শ থাকে।
হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া: ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলবো- একসঙ্গে প্রচুর পণ্য কিনবেন না। এটা ঠিক হবে না। তাহলে বাজারে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। যেটুকু প্রয়োজন ভোক্তারা যেন সেটুকু ক্রয় করে বাজারের চেইন অব সাপ্লাইয়ের কোনো সমস্যা না হয় সে দিকে যেন খেয়াল রাখে। কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে আমাদের সংযোমী হওয়া প্রয়োজন আছে। চিনির দাম বাড়ছে আমরা যদি চিনিটা যদি কম ব্যবহার করি তাহলে একটা পর্যায়ে গিয়ে দেখা যাবে তাদের পণ্য বিক্রি করতে সমস্যা হবে। গরুর মাংসের দাম বাড়ছে, আমাদের হয়তো মাংসের প্রয়োজন আছে, তবে একটু কম কিনলে দাম এমনিতেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
আমরা কিছু কিছু বাজারে দেখি কিছু ভোক্তা আছে যারা ধনী। তারা লম্বা লিস্ট নিয়ে বাজারে বসে থাকেন। গরুর মাংস ১০-১৫ কেজি একজনে কিনে আনেন। মনে হয় যে বাজার থেকে তার মালটা চলে যাবে। এই অভ্যাস ভোক্তাদের পরিহার করা প্রয়োজন। বাজারে পণ্য কিনতে গিয়ে যদি ভোক্তারা প্রতারিত হয় তাহলে ভোক্তা অধিদপ্তর কিংবা কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কে তারা জানালে অবশ্যই সে প্রতিকার পাবেন। সে জন্য ভোক্তাদেরও সচেতন হওয়ার দরকার আছে। ভোক্তা আইন সম্পর্কে তাদেরও জানা উচিৎ।
আমরা চেষ্টা করছি যাতে আইনটাও তারা বোঝে। বুঝে শুনে কেউ যাতে প্রতারিত না হয়। আমরা মনে করি ভোক্তাদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার দরকার আছে। কোথায় ভেজাল দেওয়া হচ্ছে, কোথায় প্রতারণা করা হচ্ছে এসব বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরকে অথবা ক্যাবের কল সেন্টার অথবা অভিযোগ কেন্দ্রে জানাতে পারে। এভাবে সবাই এগিয়ে এলে আরও দ্রুত সকল সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা ক্যাবের পক্ষ থেকে মনে করি।