ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: উৎপাদন খরচ, ক্রয় মূল্য, পরিবহন খরচ, অন্যান্য খরচ এবং বিক্রেতার লভ্যাংশসহ ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম নির্ধারণ করার নিয়ম থাকলেও ডিমের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ডিমের দাম নির্ধারিত হয় ডিম ব্যবসায়ী সমিতির কারসাজিতে। অর্থাৎ চাহিদা বাড়লে দাম বাড়িয়ে দেয় আবার চাহিদা কমলে দাম কমিয়ে দেয় ডিম ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ডিমের পাইকারী আড়তে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর। অভিযানের নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং মো. হাসানুজ্জামান।
কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করেই ডিম আর ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন মানুষ। দুই সপ্তাহ আগেও যেখানে ডিমের ডজন ১১০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো সেখানে হঠাৎ করে সেই দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। ব্রয়লার মুরগিও ছুঁয়েছে প্রতি কেজি ২০০ টাকায়। হঠাৎ দেশব্যাপী ডিম ও মুরগির দাম নিয়ে কারসাজি রোধকল্পে অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানীর কাওরান বাজারের ডিম, মুরগির পাইকারি ও খুচরা দোকানে তদারকিমূলক অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়ে নানা অসঙ্গতি। তারা সরেজমিন দেখতে পান ডিম ও মুরগির দাম ব্যবসায়ীরা মনমতো বাড়িয়ে দিয়ে বিক্রি করছেন।
অবশ্য আড়তদাররা মফস্বল থেকে বেশি দামে কিনে এনেছেন বলে দাবি করলেও গ্রামগঞ্জের মোকাম থেকে বাড়তি দামে ডিম কেনার কোন রশিদ দেখাতে পারেনি। খুচরা ক্রেতাদের বাড়তি দামে ডিম বিক্রির কোন রশিদ দেয়নি আড়তদাররা।
তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আমানত উল্লাহ বলেন, ‘ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে নয় বরং চাহিদা অনুযায়ী ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সমিতি থেকে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।’
অভিযানের বিষয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘ডিমের আড়ৎগুলোতে ডিম ক্রয়ের পাকা ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ করা হয় না, দুই/এক দোকানে ডিম ক্রয়ের ক্যাশ মেমো সংরক্ষণ করলেও ক্যাশ মেমোতে মূল্যের ঘর ফাঁকা থাকে। অর্থাৎ ক্রয় মূল্য বুঝতে পারা যায় না। ডিমের কোন দোকানে মূল্য তালিকা টানানো নেই। ডিমের দাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ নির্ধারণ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যা আইনসম্মত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুরগির পাইকারি আড়তে ডিমের মত একই ধরনের সমস্যা পাওয়া যায়। ভোক্তা অধিকার বিরোধী এ ধরনের বিভিন্ন অপরাধে হিমালয় ট্রেডার্স ডিমের আড়ৎ ও জনতা মা মনি ডিমের আড়ৎকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা এবং সততা মুরগির আড়ৎকে ২০ হাজার টাকা ও আলহাজ্ব এন্টারপ্রাইজকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’
মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ডিম ব্যবসায়ীরা সরবরাহ ও চাহিদা দেখে নিজেদের মতো দাম নির্ধারণ করছেন। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। সে জন্য এবার সতর্কতামূলক জরিমানা করেছি। সেটা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’