ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে ডিমের দাম। প্রতি ডিমে প্রায় তিন টাকা লাভ করারও প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অপরদিকে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব এর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মাত্র ১৪ দিনে ডিমের বাজার থেকে বাড়তি ২৬৮ কোটি ও ব্রয়লার মুরগির বাজার থেকে ২২৫ কোটি ভোক্তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ডিমের বাজার অস্থির করার পিছনে কাজী ফার্মস এর কোন যোগসাজস আছে কি না খতিয়ে দেখতে বুধবার সকালে আশুলিয়ায় কাজী ফার্মে তদারকি করে ভোক্তা অধিদপ্তর।
তদারকির নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান, সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং মো. হাসানুজ্জামান।
তদারকির বিষয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, আগামীকাল (বুধবার) সকাল ১০টায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষকে তলব করা হয়েছে।
যে কারণে তলব করা হয়েছে
ডিমের বাজারে অস্থিরতার সুযোগে প্রতি পিস ডিমে তিন টাকা ১৫ পয়সা লাভ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে দেশের অন্যতম বড় কৃষি শিল্প প্রতিষ্ঠান- কাজী ফার্মস গ্রুপের বিরুদ্ধে।
তবে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, ডিলারদের মধ্যে নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছেই তারা ডিম বিক্রি করে। ফলে অস্বাভাবিক হলেও, সেটি নিয়মের মধ্যেই হয়েছে।
এই অস্বাভাবিক মুনাফার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বুধবার (২৪ আগস্ট) কাজী ফার্মসকে তলব করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
উল্লেখ্য, গত ১৩ আগস্ট প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় বিক্রি করে কাজী ফার্মস লিমিটেড। এতে ডিম প্রতি তাদের লাভ হয় ৩ টাকা ১৫ পয়সা। তবে ডিমের এই রেকর্ড দাম উঠতে শুরু করে মূলত ৪ আগস্ট থেকে। কারণ ৩ আগষ্ট পর্যন্ত তারা প্রতি পিস ডিম বিক্রি করেছে গড়ে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা দরে। মাত্র একদিন পরেই ৪ আগস্ট থেকে সেই ডিম তারা ৯ টাকা ৬২ পয়সায় বিক্রি করে। আর ৮ আগস্ট গিয়ে সেই দাম ওঠে ১০ টাকা। ৯ আগস্ট ১০টাকা ২০ পয়সা। পরের দিন ১০ আগস্টে ১০ টাকা ৬৫ পয়সা। আর ১১ আগস্টে ১১ টাকা ৫ পয়সা দরে বিক্রি করে কাজী ফার্মস।
যা বলছে কাজী ফার্মস
প্রতিদিন সকাল ৯টায় অনলাইন নিলামের মাধ্যমে তারা ডিমের দর ঠিক করে। তাদের ১২০ জন ডিলারের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ দরদাতারাই মূলত ডিম কিনতে পারেন।
ফলে, ডিম কেনার জন্য কোম্পানির রেটের চেয়েও বেশি রেট দেয় ডিলাররা। আর এটাই তাদের দর নির্ধারনের নিয়ম বলে জানালেন কাজী ফার্মসের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সোহেল রানা।
যা বলছে ভোক্তা অধিদপ্তর
উৎপাদন ব্যয় না বাড়লেও রেটে কারসাজির মাধ্যমে অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে এই প্রতিষ্ঠান। ভোক্তা অধিকার কার্যালয়ে হাজির হয়ে তাদেরকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।
উৎপাদক, পাইকারী বা খুচরা বিক্রেতা; বাজারে কারসাজি করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না হলে হুশিয়ারী দিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
একদিন আগেই ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একদিনে প্রতি পিস ডিমের দাম তিন টাকা বাড়ায় বিষ্ময় প্রকাশ করে।
এফবিসিসিআই মনে করে, হঠাৎ ডিমের দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটি।
অপরদিকে ক্যাবের প্রতিনিধি ও ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান এফবিসিআই এর আলোচনা সভায় জানিয়েছিলেন, ১৪ দিনে ডিমের বাজার থেকে বাড়তি ২৬৮ কোটি ও ব্রয়লার মুরগির বাজার থেকে ২২৫ কোটি ভোক্তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। খামারি থেকে সংগৃহীত হয়ে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত চারটি স্তরে এ বাড়তি টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।