জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভাড়া বাড়ানো না হলেও পণ্য পরিবহনে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন পরিবহন মালিকরা। সেই অজুহাতে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দামও। দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে চাল-ডাল, পেঁয়াজ-রসুনসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এখানেও চেপে বসেছে তেলের দাম বাড়ার ‘ভূত’। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।
কক্সবাজারের টেকনাফ ও খুলনার বেনাপোল বন্দর দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার ও ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয় খাতুনগঞ্জে। খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেট হচ্ছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদসহ কাঁচামালের মূল ব্যবসা কেন্দ্র। এখানকার পাইকারি বাজারে কয়েকদিন আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর থেকে পরিবহন ব্যয় বাড়ার অজুহাতে এক লাফে ৫ থেকে ৬ টাকা বাড়িয়ে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪১ থেকে ৪২ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। চীন থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন কয়েক দিন আগে ৯৫ থেকে ৯৬ টাকায় বিক্রি করা হলেও এখন প্রতি কেজিতে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৫ টাকা করে। খুচরা বাজারে রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। এভাবে বেড়েছে আদা, হলুদসহ মসলা জাতীয় অন্যান্য পণ্যের দামও। বেনাপোল থেকে পেঁয়াজ আনতে প্রতি বস্তায় ২০ থেকে ২১ টাকা করে বাড়তি পরিবহন ভাড়া দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে তারা পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন কয়েকগুণ বেশি। ক্রেতাদের তা কিনতে হচ্ছে চড়া দামে।
চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী বাজার চট্টগ্রামের চাল ব্যবসার মূল কেন্দ্র। নওগাঁ, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, আশুগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব বাজারে চাল আসে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগে খাতুনগঞ্জে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা দেশি বেতি চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে ২ হাজার ১৫০ টাকায়। এখন ১০০ টাকা বাড়িয়ে প্রতি বস্তা দেশি বেতি চাল বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২৫০ টাকায়। আগে প্রতি বস্তা দেশি মিনিকেট ২ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। প্রতি বস্তা কাটারিভোগ
২ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০ টাকায়। প্রতি বস্তা সিদ্ধ মিনিকেট আগে ২ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ টাকায়। প্রতি বস্তা নাজিরশাইল ২ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন হচ্ছে ৩ হাজার ৫০ টাকায়। এভাবে বাড়ানো হয়েছে অন্যান্য চালের দামও।
খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, একটি ট্রাকে ১৩ থেকে ১৪ টন করে চাল আনা যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের সীতাকুণ্ডে ওজন স্কেল থাকায় এর বেশি বোঝাই করা যায় না। বিভিন্ন উৎস থেকে ট্রাকে করে চট্টগ্রামের বাজারে প্রতি টন চাল পরিবহনে এখন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বিদ্যমান ভাড়ার চেয়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি। প্রতি টন চাল পরিবহনে আগে ভাড়া পড়ত এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা। এখন প্রতি টনে তা প্রায় সাড়ে তিনশ টাকা করে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এতে চালের দাম বাড়ছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, চাল পরিবহনে ভাড়া বাড়ার কারণে চালের দামেও কমবেশি তার প্রভাব পড়ছে। প্রতি টন চালে সাড়ে ৩০০ থেকে পৌনে ৪০০ টাকা করে শুধু পরিবহন খরচই বেড়ে গেছে। এ হিসাবে প্রতি বস্তা চালে ২০ থেকে ২১ টাকা করে নতুন যোগ হয়েছে। মিনি ট্রাকে করে খুচরা বাজারে চাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও বাড়তি ভাড়া যোগ হচ্ছে।
ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর পর যে হারে ভাড়া বাড়ার কথা তার চেয়েও বেশি আদায় করছেন পরিবহন মালিকেরা। এটাকে পুঁজি করে আবার ব্যবসায়ীরাও পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ভুগতে হচ্ছে।
অবশ্য পরিবহন ভাড়া বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, প্রাইম মোভার ও লরি সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমদ বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হয়নি। তবে তেলের দাম বাড়ার কারণে ভাড়া বাড়িয়ে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে।