ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের পাইকারী দোকান থেকে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যাণ্ডের কসমেটিকস ক্রয় করে নিজেদের ইচ্ছেমত আমদানিকারকের সিল বসিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে ‘লাভ ল্যাণ্ড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। চকবাজারের কোন দোকান থেকে এসব কসমেটিকস ক্রয় করেছে তারও কোনো প্রমাণাদি নেই। যে আমদানিকারকের নাম ব্যবহার করা হয়েছে তারা এসব কসমেটিকস পণ্য আমদানি করে না।
ভোক্তাদের সঙ্গে নিয়মিত এমন প্রতারণা করে আসা এই প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা স্বার্থবিরোধী এমন অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলা ভুতের গলি এলাকায় ‘লাভ ল্যান্ড’ নামের প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। পূর্ব অভিযোগের ভিত্তিতে এখানে অভিযানে যায় ভোক্তা অধিদপ্তর।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের উপপরিচালক (তদন্ত উপবিভাগ) আফরোজা রহমান এবং ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল।
অভিযানের বিষয়ে জানা গেছে, লিরা ইম্পোর্ট নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন নামিদামি কসমেটিকস পণ্য বিক্রি করছে লাভ ল্যাণ্ড। অথচ যেসব কসমেটিকস জব্দ করা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই আমদানি করে না লিরা ইম্পোর্ট। তারপরও তাদের নাম ব্যবহার করে বিক্রি করছে তারা। তথ্য প্রমাণসহ ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করে লিরা ইম্পোর্ট নামক প্রতিষ্ঠানটি। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত লাভ ল্যাণ্ডে অভিযানে যায় ভোক্তা অধিদপ্তর।
অভিযোগের তথ্যাদি যাচাই করে দেখা যায়, ম্যাকআপ, ফেস পাউডার, আইস্যাডো, ফাউন্ডেশন, ম্যাকআপ ক্রিম, আইলাইনারসহ প্রায় ৩৩ প্রকারের কসমেটিকস পণ্য পাওয়া যায়। এসব প্রত্যেকটিতে লিরা ইম্পোর্ট কোম্পানির স্টিকার ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু লিরা ইম্পোর্ট কোম্পানি বলছে, এসব কসমেটিকস আমদানি করে না তারা।
এসব কসমেটিকস পণ্য চকবাজারের কোথা থেকে ক্রয় করা হয়েছে? কেন লিরা ইম্পোর্টের স্টিকার ব্যবহার করা হয়েছে? কোনো প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি লাভ ল্যান্ডের দায়িত্বরত ম্যানেজার।
ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের সঙ্গে লিরা ইম্পোর্টের কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় খায়রুন নাহার নামের একজন বলেন, বাংলাদেশে ম্যাকআপের নামিদামি বিদেশী ব্রাণ্ডের পণ্য আমরা আমদানি করি। আমরা সরকারি নিয়মকানুন মেনে পণ্যে আমদানিকারকের স্টিকার লাগিয়ে দেই। লাভ ল্যাণ্ড আমাদের স্টিকার নকল করে বিভিন্ন চাইনিজ প্রোডাক্টে ব্যবহার করছে। পরে আমরা ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করি। ভোক্তা অধিদপ্তর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযানে আসে। আমাদের দেওয়া তথ্যের প্রমাণ পেয়েছে। বাকি সিদ্ধান্ত ভোক্তা অধিদপ্তর নেবে।
অভিযানের সিদ্ধান্ত
অভিযানের বিষয়ে সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘কোথা থেকে এসব কসমেটিকস পণ্য ক্রয় করেছে তার সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারছে না লাভ ল্যাণ্ড। শুধু বলছে চকবাজার থেকে। তবে আপনারা জানেন চকবাজারে ভেজাল, নকল পণ্য উৎপাদিত হয়। চকবাজারের কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এনেছেন সেটিও বলছেন না তারা। লিরা ইম্পোর্টের বাইরে আরও ৩৩টি কসমেটিকস পণ্য আমরা পেয়েছি। এসব পণ্য আমরা জব্দ করেছি।
উপপরিচালক (তদন্ত উপবিভাগ) আফরোজা রহমান বলেন, ‘লাভ ল্যাণ্ড নামের প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা যেসব কসমেটিকস জব্দ করেছি এগুলো আসল না নকল তার সঠিক তথ্য দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। ভোক্তা স্বার্থবিরোধী অপরাধে ভোক্তা-অধিকার আইন অনুযায়ী জনস্বার্থে এই প্রতিষ্ঠানটিকে সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিভাবে এবং কোথা থেকে এসব কসমেটিকস পণ্য এনেছে? কি কি বৈধ কাগজপত্র আছে সব নিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এসে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। সব যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী আইনি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
চিনির বাজারে অভিযান
পরে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে চিনির বাজারে অভিযানে যায় ভোক্তা অধিদপ্তর। সে সময় কয়েকটি দোকানে খোলা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম যাচাই করা হয়। সরকার নির্ধারিত দাম থেকে বেশি দামে খোলা চিনি ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করায় ভোক্তা স্বার্থবিরোধী অপরাধে দুটি দোকানকে ৫০০ টাকা করে মোট এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সে সময় বিক্রেতারা অভিযোগ করে জানায়, পাইকারী দোকানে চিনির দাম বেশি রাখা হচ্ছে।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেসব পাইকারী দোকানী বেশি দামে চিনি বিক্রি করেছে তাদের নাম ঠিকানা নেওয়া হয়েছে, সেখানেও অভিযান চালানো হবে। আমরা মূল জায়গা পর্যন্ত পৌঁছাতে চাই। যদি দেখা যায়, চিনির মিল থেকে দাম বাড়ানো হচ্ছে তাহলে মিলে অভিযান চালানো হবে।