ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: ‘কেমিক্যাল মুক্ত, আয়োডিন যুক্ত’ এমন মিথ্যা উক্তি প্যাকেট লিখে লবণ বিক্রি করলেও নামে-বেনামে বেশিরভাগ কোম্পানির লবণে বিন্দুমাত্রও আয়োডিন পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ভ্রাম্যমান ল্যাবের মাধ্যমে রাজধানীর মিরপুরের শাহ-আলী মার্কেটের কয়েকটি দোকান থেকে লবণ সংগ্রহ করে পরীক্ষার মাধ্যমে এসব তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার বিসিক এর কয়েকজন স্পেশালিস্টকে সঙ্গে নিয়ে মিরপুরের পাইকারী বাজারে অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির সাত ব্র্যাণ্ডের লবণ সংগ্রহ করে আয়োডিন পরীক্ষা করা হয়।
লবণের আয়োডিনের যথাযথ মাত্রা হওয়া উচিত ১৫ থেকে ৫০ পিপিএম। তবে বেশিরভাগ লবণ আয়োডিন সমৃদ্ধ নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড রোগ হয় যাতে থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে গলা ফুলে যায়। এতে বিকলাঙ্গতাও দেখা দিতে পারে। আয়োডিনের অভাবে গর্ভবতীদের গর্ভস্রাবেরও ঝুঁকি থাকে।
১৯৮৯ সালে আয়োডিন স্বল্পতার রোগ নিবারণ আইন পাস করার এবং ১৯৯৩ সালে এক সমীক্ষায় বাংলাদেশে ৪৭ দশমিক এক শতাংশ মানুষের গলগণ্ড রোগ থাকার কথা ধরা পড়ার পর ১৯৯৪ সালে আয়োডিনহীন লবন বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার।
অভিযানে, বাজারের বিভিন্ন পাইকারী দোকান থেকে নামে-বেনামে সাতটি ব্র্যান্ডের লবণ পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে- ডলফিন, এসিআই, ফ্রেশ, শাহীন মোল্লা, হিমু সল্ট, নিউ জোড়া ডলফিন, নিউ কোয়ালিটি সল্ট ইন্ডাস্ট্রিস।
পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায়, এসব লবণের মধ্যে নিউ কোয়ালিটি সল্টে ৪ দশমিক ২৫ পিপিএম আয়োডিন, নিউ জোড়া ডলফিন, শাহীন মোল্লা, হিমু সল্টে কোনো প্রকার আয়োডিন পাওয়া যায়নি। এছাড়া এসিআই এবং ফ্রেশ লবণে যথাযথ মাত্রা অনুসারে আয়োডিন পাওয়া যায়।
পরীক্ষা পদ্ধতি: বিভিন্ন প্রকার লবণ পানিতে ভালোভাবে মিশ্রিত করতে হবে। সেই পানি একটি টিউবের মধ্যে অর্ধ পরিমাণ নেওয়া হয়। পরে সেই টিউবে সিরিজের মাধ্যমে আয়োডিন পরীক্ষার কেমিক্যাল প্রবেশ করানো হয়। লবণ মিশ্রিত পানিতে কেমিক্যাল দেবার পর যদি লবণে আয়োডিন থাকে তবে লবণ মিশ্রিত পানি বেগুনী বর্ণ ধারণ করবে। আর যদি আয়োডিন না থাকে তবে কোনো বর্ণই ধারণ করবে না। এছাড়া বিসিকের ভ্রাম্যমাণ ল্যাবের যন্ত্রের মাধ্যমে লবণে আয়োডিনের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
মিরপুরের শাহ আলী মার্কেটের তন্ময় এন্টারপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি পাইকারী দোকানে আয়োডিন নেই এমন লবণ পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে সব লবণ ধ্বংস করা হয়। এবং পরবর্তীতে এসব লবণ বিক্রি করলে আইনগত ব্যবস্থার কথা জানানো হয়।
অভিযানের বিষয়ে অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, মিরপুরের এই বাজারে আমরা ৭টি ব্র্যান্ডের লবণ বিসিকের স্পেশালিস্টদের সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা করেছি। এদের মধ্যে ৪টি ব্র্যাণ্ডের লবণে কোনো প্রকার আয়োডিন নেই। এসব কোম্পানি লবণের মোড়কে আয়োডিন আছে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। আয়োডিন নেই এমন লবণ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, বিপদজনক।
তিনি বলেন, আয়োডিন নেই এমন সব লবণ জব্দ করে জনসম্মুখে ধ্বংস করা হয়। একই সঙ্গে যারা এসব লবণ উৎপাদন করে সেসব কোম্পানিকে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে ডাকা হবে। এবং পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও অভিযান
প্রিন্স সুইটস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে মেয়াদোত্তীর্ণ কেক পাওয়ায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া একটি মিষ্টির দোকানকে ২ হাজার টাকা এবং আরও একটি প্রতিষ্ঠানকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মাগফুর রহমান।