ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: রাজধানীর বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ছেই। কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। প্রতিদিনই পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে কেজিপ্রতি বাড়ছে। বাজার ভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬৫ থেকে ২৭৫ টাকা। লাল লেয়ার ৩৪০ টাকা এবং কক মুরগি ৩৮৫ টাকা কেজি।
তবে ব্রয়লার মুরগির দাম অযৌক্তিক দাবি করে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘ভোক্তা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকার ওপরে হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি এবং সরকারের কাছে আটটি সুপারিশ জমা দিয়েছি। আশা করি সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন, তারা অবশ্যই ভোক্তাদের কষ্ট লাঘবে ব্রয়লারের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করবেন।’
বুধবার দুপুরে রাজধানীর নিউমার্কেটের বনলতা কাঁচা বাজার তদারকি শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এই মুহূর্তে ভোক্তাদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে পণ্যের ঘাটতি নেই। ভোক্তাদের প্রয়োজনমত পণ্য ক্রয় করতে এবং একসঙ্গে পুরো রমজানের জন্য পণ্য কিনে বাজার অস্থিতিশীল করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন।’
এর আগে তিনটি সংস্থার সমন্বিত পরিদর্শকরা বাজার ঘুরে দেখেন এবং নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দাম না রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানান। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির উদ্যোগে সমন্বিত ভাবে এ বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ও এফবিসিসিআইয়ের নেতারা।
দেশে কোনো বাজার অস্থির হলে সেই বাজার কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি। তিনি বলেন, ‘কোন অযৌক্তিক লাভ করার আশায় কেউ মূল্য বৃদ্ধি করলে বা অবৈধ মজুদ করে বাজার অস্থিতিশীল করলে তার দায় সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটিকে নিতে হবে এবং সেই বাজার কমিটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তদারকিকালে মাছ, মুরগি, চাল ও মুদি দোকানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। তদারকিতে দেখা যায়, ছোলা ও মুশুরির ডালের দাম নিম্মমূখী এবং অন্যান্য পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। ব্রয়লারের মুরগির দামের ক্ষেত্রে কোন অসঙ্গতি আছে কি না তা যাচাইয়ে মুরগির ক্রয় ভাউচার দেখে যে দোকান থেকে ক্রয় করা হয়েছে সে দোকানে তাৎক্ষণিক তদারকির জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অপর একটি টিমকে নির্দেশনা দেন। রমজানে কোনো ভাবেই যেন ব্রয়লারের মুরগির দাম না বাড়ে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘পণ্য কিনি প্রয়োজনে, মূল্য রাখি নিয়ন্ত্রণে’ এমন স্লোগানে তদারকির সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি। বাজার ঘুরে দেখেছি কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। দু-একটি জিনিসের দাম কিন্তু কমেছে। এখন শুধু অস্থিরতা রয়েছে ব্রয়লার মুরগির বাজারে। কিন্তু এই দাম ২০০ টাকার উপরে হওয়ার কথা নয়। অথচ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়, অর্থাৎ ৮০ টাকাই বেশি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে মুরগীর দাম নিয়ে আমরা কাজ করেছি। এ বিষয়ে আমরা আটটি সুপারিশ দিয়েছি সরকারের কাছে। আশা করি, ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনায় মুরগির বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে এফবিসিসিআই ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিসহ সকল বাজার কমিটি যৌথ ভাবে কাজ করবে।’
এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘বাজার অস্থিতিশীলকারী অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সরকারি আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার এবং এতে এফবিসিসিআই এর সমর্থন থাকবে।’
গত ০৯ মার্চ পোলট্রি খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ভোক্তা অধিদপ্তর। তখন ব্রয়লার মুরগির দাম না কমলে আমদানির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। কিন্তু তারপরও আরেক দফা বেড়েছে মুরগির দাম।