ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগীর দাম ১৯০ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। প্রত্যেক দোকানে ১৯০ টাকা উল্লেখ করে মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর থেকে বেশি নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে ভোক্তা স্বার্থবিরোধী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজারে অভিযানে গিয়ে এসব কথা বলেন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল।
এ সময় সঙ্গে ছিলেন উপ-পরিচালক শাহনাজ সুলতানা।
সকল মুরগী ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘যেহেতু মুরগীর ক্রয় মূল্য ১৯০ থেকে কম। এখন ব্রয়লার মুরগী পাইকারী কিনছেন ১৭০ টাকা, ২০ টাকা লাভে ১৯০ টাকা বিক্রি করতে হবে। প্রতি দোকানে বিক্রয় মূল্য টানিয়ে দিতে হবে। এবং প্রত্যেক দোকানীকে ক্রয় মূল্য সংরক্ষণে রাখতে হবে। আমরা আজ সতর্ক করলাম, যদি কেউ না মানে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ সময় কয়েকটি মুরগীর দোকান ঘুরে দেখেন ভোক্তা কর্মকর্তারা। কয়েকটি দোকানে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগী ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। একটি দোকান ২১০ টাকা বিক্রি করায় ভোক্তা স্বার্থবিরোধী আইন ২০০৯ অনুসারে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া একটি দোকানে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
মুরগীর বাজারে অভিযানের বিষয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘দেশব্যাপী ব্রয়লার মুরগীরসহ রমজান কেন্দ্রীক পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে কাওরান বাজারের মুরগীর বাজারে আমরা তদারকি করলাম। এখানে এসে আমরা দেখলাম, ক্রয় মূল্য কত? কোথা থেকে ক্রয় করেছেন? বিক্রয় মূল্য কত? মূল্য তালিকা তারা প্রদর্শন করছে কি না? এই বাজারে আমরা কিছুটা অসামঞ্জস্য পেয়েছি। গতকাল ১৮০ টাকা ব্রয়লার মুরগী ক্রয় করে খুচরায় বিক্রি করেছে ২০০ টাকায়। আজকে একই ব্রয়লার মুরগী ক্রয় করেছে ১৭০ টাকা। কিন্তু বিক্রয় করা হচ্ছে ২০০ টাকা করে। একটি দোকানে দেখলাম ১৯০ করে বিক্রি করছে। বাকি দোকানগুলোতে ২০০ করে বিক্রি করছে। দুটি প্রতিষ্ঠানে ক্রয়ের ক্যাশ ম্যামো পাইনি। তাদেরকে অধিদপ্তরের ডাকা হয়েছে। সেখানে ক্রয় রশিদ দেখাতে বলা হয়েছে। যদি দেখাতে না পারে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দোকান নয়, যেন মেয়াদোত্তীর্ণের গুদাম
মেরিন্ডা, পেপসি, স্প্রাইট, রাধুনি হালিম মিক্স, ফুড গ্রেড রংসহ দোকানের বেশির ভাগ পণ্যের মেয়াদ নেই। কিছু কিছু পণ্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। তারপরও বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এমনকি ক্রেতাদের কাছে এসব মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রিও করা হয়েছে।
রাজধানীর মগবাজার ওয়ার্লেস গেট এলাকায় লক্ষ্মীপুর জেনারেল স্টোর নামের একটি মুদি দোকানের এমন চিত্র হাতেনাতে ধরে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
জানা যায়, একজন ক্রেতা এই দোকান থেকে মাঠা কিনে প্রতারিত হয়েছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ মাঠা দেওয়া হয়েছিল। পরে ওই ক্রেতা ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ দেন। পরে আজ সকালে এই দোকানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
স্থানীয়রাও এই দোকান মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, প্যাকেটের মূল্য ঘষে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে এই ব্যবসায়ী।
পরে লক্ষ্মীপুর জেনারেল স্টোরের মালিককে ভোক্তা স্বার্থবিরোধী অপরাধে ভোক্তা-অধিকার আইন ২০০৯ অনুসারে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এবং আগামী তিন দিন দোকান বন্ধ রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ সকল পণ্য পরিস্কার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ সকল পণ্য জব্দ করে জনসম্মুখে ধ্বংস করা হয়।
তদারকির সময় অভিযোগ করেই পেলেন ২৫ শতাংশ ক্ষতিপূরণ
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিয়মিত বাজার তদারকির সময় এক ভোক্তা অভিযোগ করেন, ৮০ টাকার গ্যাস্টিকের সিরাপ তার কাছ থেকে ৮৫ টাকা নেওয়া হয়েছে।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ভোক্তা কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার মণ্ডল প্রমাণ এবং অভিযোগকারীসহ মগবাজারের আমিন ড্রাগ হাউজ নামের একটি ফার্মেসিতে উপস্থিত হন। সেখানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান এবং ফার্মেসীতে তদারকি করে আরও কয়েক প্রকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ এবং ফিজিশিয়ান স্যাম্পল পাওয়া যায়।
দাম বেশি নেওয়ার বিষয়ে ফার্মেসী মালিক জানান, গ্যাস্টিকের সিরাপের দাম কোম্পানি বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে আমি যে ওষুধ বিক্রি করেছে সেই ওষুধ আগের দামে কেনা ছিল কিন্তু বাড়তি লাভের জন্য বাড়তি দামে বিক্রি করেছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে।
ভোক্তাকে ঠকিয়ে বেশি দামে ওষুধ বিক্রির অপরাধে আমিন ড্রাগ হাউজের মালিককে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়ায় আরও আট হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযোগকারীর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জরিমানার দুই হাজার টাকার ২৫ শতাংশ ৫০০ টাকা তাৎক্ষণিক ভাবে প্রদান করা হয়।
এতো দ্রুত সমাধান পাওয়ায় অভিযোগকারী জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এমন কার্যক্রমে সন্তষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘গ্যাস্টিক সিরাপটির মোড়কে এমআরপি দেওয়া আছে ৮০ টাকা। তারপরও এই ফার্মেসীর মালিক ৮৫ টাকা নেয়। পরে আমি ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান দেখে তাদের কাছে অভিযোগ দেই। তারা তাৎক্ষণিক এসে বিষয়টি সমাধান করেন। ভোক্তা অধিদপ্তরের এমন কাজে আমি খুবই খুশি। সরকারের কর্মকর্তা যদি সকলে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতো আমাদের পাশে থাকে তাহলে আমরা অনেক কৃতার্থ হবো।’