ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও রাইড শেয়ারিং নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সহ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত সুপারিশ করবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় সকল পক্ষের অভিযোগ এবং পরামর্শ আলোচনা শেষে এ তথ্য জানান ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
সভায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা মালিক প্রতিনিধি, রাইড শেয়ারিং ড্রাইভারস ইউনিয়নের সদস্য এবং রাইড কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ভোক্তাদের পক্ষে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর প্রতিনিধি, বিআরটিএ’র প্রতিনিধি, ডিএমপির পক্ষ থেকেও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে সিএনজিচালক, চালক সমিতি ও মালিকপক্ষ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগের কথা তুলে ধরেন।
পক্ষান্তরে ভোক্তাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, নামে মাত্র সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলোতে মিটার সাজিয়ে রাখা হলেও কোনটিই চালু নেই, যা ভোক্তা ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা বলে সিএনজিচালকদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
এদিকে, রাইড শেয়ারিং এর রাইডাররা অভিযোগ করেন, কোন রকম তদন্ত ছাড়াই রাইড শেয়ারিং কর্তৃপক্ষ একতরফা ভাবে চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে, এটি অন্যায়। রাইড শেয়ারের ভাড়া নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা আছে। পিক/অফপিক আওয়ারের ভাড়া নির্ধারণে ভোক্তারা প্রতারিত হয়ে থাকেন।
রাইডারদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেন রাইড শেয়ারিং কর্তৃপক্ষ। ভাড়াসহ রাইডারদের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের পথ রয়েছে বলেও জানান তারা।
তবে ক্যাবের পক্ষ থেকে ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং এর কারণে সিএনজি চালকরা সিঙ্গেল যাত্রীদের ভাড়া তেমন পায় না। এতে তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। এছাড়া সিএনজিতে মিটার থাকলেও কেউ মিটারে যায় না। সিএনজিতে ওঠার আগে ভাড়া চুক্তি করে উঠতে হয়। রাইড শেয়ারিং এর নামে সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। যে অর্থে রাইড শেয়ারিং নীতিমালা করা হয়েছিল তার অনেক কিছুই মানছে না রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো। এ ক্ষেত্রে বিআরটিসিরও অবহেলা রয়েছে।’
সকল পক্ষের আলোচনা শুনে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলো মিটারে চলে না। মিটার শুধুমাত্র ডিসপ্লেতেই রাখা হয়। এটা এক ধরনের প্রতারণা। প্রতিদিনই আমরা খবরেও এসব চিত্র দেখি। যাত্রীদের সঙ্গে প্রতিনিয়তই ঝামেলা হয়, এমনকি হাতাহাতি পর্যায়ে চলে যায়। এছাড়া যাত্রীরা যেখানে যেতে চায়, চালক সেখানে যেতে বাধ্য। কিন্তু চালকরা যেতে চান না। এটা নিয়ে আমাদের অনেক অভিযোগ শুনতে হয়। এটার বাস্তবতাও আছে। এটা কেন হয়? এটা তো সুস্পষ্ট অনিয়ম।’
সিএনজির বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রায় সময় দেখি সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী পরিবহনের সিট পরিচ্ছন্ন থাকে না। বৃষ্টির সময় পর্দা থাকে না। অনেক সময় অপরিচ্ছন্ন পর্দা থাকে। ছাউনি ঠিক না থাকা। যাত্রীর নিরাপত্তার জন্য তৈরি করা দরজা ভেতর থেকে যাত্রী কর্তৃক খুলতে না পারা।’
রাইড শেয়ারিং এর বিষয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং নিয়ে সব থেকে বেশি অভিযোগ আসে রাইড রিকোয়েস্ট পাওয়ার পর চালক কর্তৃক যাত্রীর নিকট ফোনে গন্তব্য জানতে চাওয়া এবং গন্তব্য পছন্দ না হলে রিকোয়েস্ট ক্যান্সেল করে দেন। এছাড়াও দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় রেখে হঠাৎ করে রিকোয়েস্ট বাতিল করে দেয়। এতে ভোক্তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় এবং সময় নষ্ট হয়।’
তিনি বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং কর্তৃপক্ষ ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রেও কারো সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বিভিন্ন নিয়ম পরিবর্তন এবং ভাড়া চাপিয়ে দেয়। এতে চালক এবং যাত্রীদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।’
সবশেষে সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং রাইড শেয়ারিং এর নানা বিষয়ে আলোচনা শেষে ভোক্তার ডিজি বলেন, ‘আজকের মতবিনিময় সভায় যেসব বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হলো এবং যেসব পরমর্শ এবং অভিযোগ এসেছে, এসব বিষয় নিয়ে বিআরটিএ সহ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আকারে সুপারিশ করা হবে। আশা করছি যথাযথ কর্তৃপক্ষ সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে সকল সমস্যার সমাধান করবেন।’