ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: দোকানের সামনে বড় করে সাইনবোর্ড টানানো। যেখানে লেখা রয়েছে মেসার্স লার্জ ফার্মেসী। এখানে সকল প্রকার দেশী-বিদেশী ওষুধ সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের চেয়ারম্যান বাড়ী মোড় এলাকায় এই ফার্মেসীটি। বাইরে থেকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দোকান মনে হলেও ভেতরে পাওয়া যায় জীবনকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেওয়া মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ।
শুধু ওষুধেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। শিশু খাদ্য, গুড়া দুধও মেয়াদোত্তীর্ণ। এই ফার্মেসীকে ওষুধের দোকান না বলে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের গুদাম বললেও ভুল হবে না।
সোমবার দুপুরে মেসার্স লার্জ ফার্মেসীতে অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং মো. মাগফুর রহমান।
রাস্তার ধুলায় মোড়ানো এই ফার্মেসীর প্রতিটি তাকে সাজানো রয়েছে ওষুধ। অভিযানের শুরুতে প্রতিটি তাকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খুঁজতে থাকেন জব্বার মণ্ডল। যেখানেই হাত দেন মিলে যায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। প্রায় আধা ঘণ্টার অভিযানে দেখা যায়, দোকানের বেশির ভাগ ওষুধই মেয়াদোত্তীর্ণ। একটি ফার্মেসীতে এতো পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দেখে ভোক্তা কর্মকর্তারাও অবাক। কোন ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়েছে এক থেকে দুই বছর আগে। তারপরেও বিক্রির জন্য তাকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। শুধু ওষুধ নয় ইনজেকশন, ফ্রিজে রাখা ইনসুলিন, সাপোজিটরি, এন্টিবায়োটিক, শিশু খাদ্য সবই মেয়াদোত্তীর্ণ।
সাধারণভাবে মনে হতে পারে, তাহলে কি যা বিক্রি করা হয়, সবই মেয়াদোত্তীর্ণ। এমন প্রশ্নের সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেনি ফার্মেসী মালিক। নিজের ভুল স্বীকার করে নিজেকে শুধরে নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
জরিমানা
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির জন্য সংরক্ষণে রাখার অপরাধে ভোক্তা-অধিকার আইন ২০০৯ অনুসারে ৫১ ধারায় দোষী সাবস্ত করে ফার্মেসী মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
৫১ ধারা
মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রয়: মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
এছাড়া পাশের একটি কনফেকশনারীকে ভোক্তা স্বার্থবিরোধী অপরাধে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানের বিষয়ে যা বললেন ভোক্তা কর্মকর্তা
আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, মেসার্স লার্জ ফার্মেসীতে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রিয়ের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছিল। এবং পাশের একটি কনফেকশনারীতে অবৈধ ক্রিম বিক্রি করা হচ্ছিল। এসব অপরাধে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ভোক্তাদের প্রতি আহ্বান করে তিনি বলেন, যেকোনো পণ্য ক্রয় করার সময় মেয়াদ আছে কি না একটু দেখে ক্রয় করবেন। যদি মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য দেখেন তাহলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করুন এবং প্রতিকার নিন। এছাড়া ১৬১২১ নাম্বারে কল দিয়েও যেকোনো ভোক্তা স্বার্থবিরোধী অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন।