ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: ১২ কেজি ওজনের বিভিন্ন কোম্পানির এলপি গ্যাস সরকারিভাবে ১ হাজার ২৩২ টাকা নির্ধারিত হলেও ভোক্তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৭৫০ টাকা। প্রতিটি ১২ কেজি গ্যাস বিক্রি করে বাড়তি লাভ করছেন ৫১৮ টাকা।
এছাড়া ৩৫ কেজিও ওজনের এলপি গ্যাসের সরকার নির্ধারিত দাম ৩৫৯৫ টাকা, তবে বিক্রি করেছেন ৪৮০০ টাকায়। ভোক্তাকে ঠকিয়ে বাড়তি ১২০৫ টাকা লাভ করছে ‘বন্ধন এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার সকালের রাজধানীর কমলাপুর এলাকায় ‘বন্ধন এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানের নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান, সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং সহকারী পরিচালক মো. মাগফুর রহমান।
যদিও আজ থেকে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ১ হাজার ২৩২ টাকা থেকে ২৬৬ টাকা বাড়িয়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এই দাম ঘোষণা করেছে। বর্ধিত এই দাম আজ থেকে কার্যকর হবে। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে বিইআরসি।
এর আগে গত ২ জানুয়ারি ১২ কেজি এলপিজির দাম ৬৫ টাকা কমিয়ে ১২৩২ টাকা করা হয়।
অভিযানে দেখা যায়, ‘বন্ধন এন্টারপ্রাইজে’ এলপি গ্যাসের কোনো মূল্য তালিকা টানানো নেই। নিজেদের ইচ্ছেমত দাম নিচ্ছেন। এলপি গ্যাসের ক্রয় মূল্যের রশিদ যাচাই করে দেখা যায়, ১২ কেজির একটি এলপি গ্যাস কোম্পানির কাছ থেকে কিনেছেন ১০৪০ টাকায়, লাভসহ সরকার নির্ধারিত ১২৩২ টাকা বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি করছেন ১৭৫০ টাকায়। এছাড়া ৩৫ কেজির এলপি গ্যাস কোম্পানির কাছ থেকে কিনেছেন ২৯০০ টাকায়। লাভসহ সরকার নির্ধারিত ৩৫৯৫ টাকায় বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি করছেন ৪৮০০ টাকায়।
ভোক্তা স্বার্থ বিরোধী অপরাধে এই প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানের বিষয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘ভোক্তা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের নির্দেশে দেশব্যাপী এলপি গ্যাসের উপর অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। কমলাপুরের এই দোকানে গ্যাস বিক্রির কোনো মূল্য তালিকা নেই। পরে আমাদের নির্দেশে মূল্য তালিকা টানায়। এছাড়া সরকারের নির্ধারিত দামের থেকে অধিক মূল্যে গ্যাস বিক্রি করছেন। যা দণ্ডণীয় অপরাধ।’
তবে ব্যবসায়ীর অভিযোগ, কোম্পানি থেকে অন্যান্য খরচের নামে ১২ কেজির একটি এলপি গ্যাসে বাড়তি ৩৬০ টাকা করে নেওয়া হয়। এবং ৩৫ কেজির একটি এলপি গ্যাসে বাড়তি নেওয়া হয় ৮৫০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে কোম্পানি থেকে কিনতে হয়। তাহলে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করবো কিভাবে?
দেশে ২৫টির মতো এলপি গ্যাস বিপণন কোম্পানি রয়েছে। তার মধ্যে গুটিকয়েক কোম্পানি এলপি গ্যাস আমদানি করে থাকেন। তবে সবার বটলিং প্ল্যান্ট রয়েছে। ফলে এলপি গ্যাসের বাজারও তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। আমদানি কারকরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে গ্যাসের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আমেরিকা রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদা মেটাতেন। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া গ্যাস বিক্রি বন্ধ করে দেয়। পশ্চিমা দেশগুলো এত দিন তাদের কাছে মজুত থাকা গ্যাস দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েছে। এখন তাদের মজুত কমে এসেছে। ফলে এসব দেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে জ্বালানি কিনতে ঝুঁকে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে অন্য দেশগুলোও জ্বালানি আমদানি করে থাকেন। এখন মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে জ্বালানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়ে গেছে।