সরকার নির্ধারিত ১২ কেজি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১২৩৫ টাকার পরিবর্তে ১৪৫০ টাকা বিক্রি করায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে মোট দুই লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের ডিলার এবং খুচরা দোকানে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর।
গত ০৭ সেপ্টম্বর ১২ কেজি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারে ১৬ টাকা বাড়িয়ে নতুন করে ১২৩৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে সরকার।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং শাহ আলম।
অভিযানে যা দেখা যায়
মগবাজার এলাকার আহমেদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় মূল্যের রশিদের কারবোন কপি দেখতে চায় ভোক্তা কর্মকর্তারা। এ সময় দেখা যায়, প্রতিটি ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম নেওয়া হয়েছে ১৪৫০ টাকা। একই এলাকার এম আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ নামের আরও একটি প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ মেমোতেও ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
এদিকে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের খবরে মেসার্স এস এইচ এন্টার প্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায়। পরে ফোন করে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে ডেকে এনে অভিযান চালানো হয়। এখানেও একই ধরনের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়। এই প্রতিষ্ঠানটি ওমেরা গ্যাস, সেনা গ্যাস, যমুনা গ্যাস, বিএম গ্যাস এবং বসুন্ধরা গ্যাসের ডিলার।
ভোক্তা কর্মকর্তাদের বক্তব্য
অভিযানের বিষয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। তারপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন বাহানায় দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। যা অপরাধ। মগবাজার এলাকায় তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে বেশি দাম নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব অপরাধে আহমেদ এন্টারপ্রাইজকে ৫০ হাজার টাকা, এম আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ ২০ হাজার, মেসার্স এস এইচ এন্টারপ্রাইজকে ৫০ হাজার টাকাসহ রাজধানীর অন্য এলাকায় আমাদের আরও একটি টিম দুটি প্রতিষ্ঠানকে মোট এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে। মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া, এসব প্রতিষ্ঠানকে জনস্বার্থে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
যা বলছেন ব্যবসায়ীরা
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার নির্ধারিত দামে কোনো কোম্পানিই এলপিজি গ্যাস দিচ্ছে না। প্রতিটি ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার সরকার খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছে ১২৩৫ টাকা। কিন্তু গ্যাস কোম্পানিগুলো পাইকারীতেই আমাদের কাছে নিচ্ছে ১২৫০ টাকা। এতে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
১৪৫০ টাকা বিক্রি করার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, অনেক সময় বাসায় বাসায় গ্যাসের সিলিন্ডার পৌঁছে দিতে হয়। তাই যাতায়াত ভাড়াসহ এই দাম নেওয়া হয়।
তবে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করার সময় ক্রেতাদের দেওয়া ক্যাশ মেমোতে যাতায়াত ভাড়া বাবদ টাকা নেওয়ার কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। শুধু ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারের মূল্য ১৪৫০ টাকা লেখা রয়েছে।
‘কোম্পানিগুলোর দাম বেশি নিচ্ছে’ ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ভোক্তা কর্মকর্তারা জানান, যেসব কোম্পানি বেশি দাম নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করুন।
তবে কোম্পানিগুলো যে বেশি দাম নিচ্ছে এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি ব্যবসায়ীরা।
আগামী রোববার সকালে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সসহ সকল প্রমাণাদি নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে উপস্থিত থাকতে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।