ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: এক-দুই হাত নয়, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাঁচ থেকে ছয় হাত বদল হবার পর আপেল-কমলাসহ আমদানি করা বিভিন্ন ফল সাধারণ ভোক্তার কাছে পৌঁছাচ্ছে। প্রত্যেক হাতে ব্যবসার নামে কাগজ লেনদেন করে কমিশনের বাহানায় হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এতে হু-হু করে বাড়ছে বিদেশী ফলের দাম। ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর বাদামতলীতে বিদেশী আমদানি করা ফলের পাইকারি আড়তে অভিযানে গিয়ে এমন তথ্য দেখতে পায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল।
জানা যায়, ভারত বা অন্যান্য দেশ থেকে বিভিন্ন ফল আমদানি করেন আমদানিকারক। পরে আমদানিকারকের কাছ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীসহ আরও ৪ থেকে ৫ হাত বদলের পর খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছায় এসব ফল। খুচরা ব্যবসায়ীরা সাধারণ ভোক্তার কাছে এসব বিদেশী ফল বিক্রি করেন অধিক দামে।
বাদামতলী আড়তে গিয়ে দেখা যায়, ২০ থেকে ২২ কেজি ওজনের আপেলের খাঁচি বা বক্স খুচরা ব্যবসায়ীর আগের হাতে চার হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি কমিশনে বিক্রি করছেন। এর আগে এই আপেল আমদানিকারকের হাত ধরে আরও তিন থেকে চার হাত ঘুরে এই ব্যবসায়ীর কাছে এসেছে। প্রত্যেক হাতে কমিশনের বাহানায় সর্বনিন্ম ৫০ টাকা কমিশন নিয়ে থাকেন। চার থেকে পাঁচ হাত বদলের কমিশন ৫০ টাকা করে ধরলেও এসব ব্যবসায়ী ২২ কেজি আপেলে ২৫০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০ টাকা বা তার অধিক কমিশন নেয় এসব ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাত বদলের এই ব্যবসা দীর্ঘদিনের। কেউ চাইলেও সরাসরি ফল এনে এখানে বিক্রি করতে পারবে না। হাত বদল করে কমিশন দিয়েই বিক্রি করতে হবে।
অভিযানে দেখা যায়, বেশির ভাগ ব্যবসায়ীদের নেই কোনো ট্রেড লাইসেন্স। সরকারকে কোনো ভ্যাট ট্যাক্সও দেয় না। এমনকি পণ্য বিক্রির কোনো পাকা রশিদও নেই। শুধু হাত বদলেই কমিশনের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
ফলের পাইকারি আড়ৎ বাদামতলীর সব ব্যবসায়ীর চিত্র একই রকম। পরে ভোক্তা স্বার্থবিরোধী অপরাধে দুই ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিদপ্তর।
এ সময় সকল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মাইকিং করে পাকা ক্যাশ ম্যামো রাখা এবং পণ্য বিক্রি করার সময় পাকা ক্যাশ ম্যামো দেওয়া, কার্বন কপি সংগ্রহে রাখা এবং অত্যাধিক হাত বদল না করে ফলের দাম ভোক্তার নাগালের মধ্যে রাখতে বিশেষ ভাবে অনুরোধ এবং নির্দেশনা দেওয়া হয়। অন্যথায় ভোক্তা স্বার্থবিরোধী অপরাধে আইনের আওতায় আনা হবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়।