গরুর মাংসের দর কমানো নিয়ে বিভ্রান্তি

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: বর্তমান বাজারে গরুর মাংস সর্বোচ্চ ৭৫০ টাকায় বিক্রি হলেও ৮০০ টাকা দাবি করছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন। দাম কমানোর অনুরোধে ৮০০ টাকা থেকে ৫০ টাকা কমিয়ে ৭৫০ টাকা করতে চায় সংগঠনটি।

বিভ্রান্তি এড়াতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমান বাজার দর থেকে ৫০ টাকা কমানো হবে।

তবে উপস্থিত সাংবাদিকদের মতে গরুর মাংসের বর্তমান বাজার দর ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন মতে ৮০০ টাকা।

রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আয়োজিত গরুর মাংসের মূল্য হ্রাস করে ভোক্তাদের ক্রয় সীমার মধ্যে আনয়নের লক্ষ্যে অংশীজনদের অংশগ্রহণে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালাটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন।

গরুর ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন দাবি করেন, ‘বর্তমানে ভালো মানের মাংস ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে সোমবার থেকে ৫০ টাকা কমিয়ে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি করবেন। তবে এই দাম সব গরুর মাংস বিক্রেতাদের জন্য নয়, শুধুমাত্র বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যেসব সদস্য ব্যবসায়ী গরুর মাংস বিক্রি করেন তারা এই দামে বিক্রি করবেন।’

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘আজকের এই কর্মশালার মূল আকর্ষণ হচ্ছে, গুরুর মাংসের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখানে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন রয়েছেন। তাকে আমি অনুরোধ করেছি গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা রাখতে। তবে সব খরচ হিসেবে ৭২৫ টাকা রাখার জন্য অনুরোধ করছি। মূল সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেবেন ইমরান হোসেন।’ এ কথা বলে মাইক্রোফোন তার দিকে দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

ভোক্তার ডিজির এমন অনুরোধের প্রেক্ষিতে মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘৭২৫ টাকা নয়, সোমবার থেকে ৭৫০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি করা হবে।’

তবে ইমরান হোসেনের এই দাম ঘোষণার পর উপস্থিত সাংবাদিকরা বলেন, বর্তমান বাজারে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। তাহলে আপনি দাম কমালেন কিভাবে?

এমন প্রশ্নে ইমরান হোসেন বলেন, ‘বাজারে অনেক ধরনের মাংস বিক্রি হয়। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। গত দুই বছর থেকে তারা দাম নির্ধারণ করছে না। কারণ মাংস এক রকমের না, অনেক রকমের আছে। আজকে বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। সে হিসেবে আমরা ৫০ টাকা কমিয়ে ৭৫০ দরে বিক্রি করতে চাই।’

এ সময় কয়েকবার ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি ৭২৫ টাকা দরে মাংস বিক্রি করার অনুরোধ করলেও সে বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেননি ইমরান হোসেন।

এতে কর্মশালায় কিছুটা হট্টগোল সৃষ্টি হলে ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, ‘বর্তমানে ভালো মানের গরুর মাংস যে দরে যাচ্ছে তার থেকে ৫০ টাকা কমে বিক্রি করবে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন।’

এমন দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেনের হিসেব অনুযায়ী, গরুর খামারীরা অনলাইনে বা অফলাইনে ভালো মানের গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে। সে হিসেবে সোমবার থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হবে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘গরুর মাংসের দাম কোনো ভাবেই ৮০০ টাকা কেজি হতে পারে না। আমরা দাম কমানোর জন্য সুপারিশ করবো। পাশাপাশি এই কর্মশালায় যেসব বিষয় আলোচনা হয়েছে সেগুলো আমাদের সুপারিশের সঙ্গে যুক্ত করবো।’

কর্মশালায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আরসিসি/নর্থ বেঙ্গল, গ্রে/শাহীওয়াল জাতের একটি গরু থেকে ১২০/১৫০ কেজি মাংস আহরণ করা সম্ভভ। অপরদিকে দেশিয় গরুর সঙ্গে এই সকল জাত সংকরায়ণ না করে আমরা যদি বাব্রমান এর মতো উন্নত জাতের সংকরায়ণ করি তাহলে সমপরিমাণ শ্রম ও ব্যয়ের পরিবর্তে আমরা দুই বছরের একটি গরু থেকে ২৫০/৩০০ কেজি মাংস আহরণ করতে পারবো। এই একটি মাত্র পদক্ষেপেই মাংসের উৎপাদন খরচের অনেক অংশ কমানো সম্ভব যা সরাসরি মাংসের মূল্য হ্রাসে সাহায্য করবে।

-এসআর