ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘বাংলাদেশে হার্টের পেসমেকার ও ভাল্বসহ মেডিকেল ডিভাইস যে দামে আমদানি করা হয় তা রোগীদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে দামের বিস্তর ফারাক থাকে। মেডিকেল ডিভাইসের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি ও দামের যে তথ্য আমরা পেয়েছি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটা অ্যানালাইসিস করে যে তথ্য পেয়েছি, এ দুইয়ের দামের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলাদা একটি স্টাডি করেছি, সেখানেও এসব পণ্যের দামে বিস্তর ফারাক পেয়েছি।’
রোববার দুপুরে ভোক্তা অধিদপ্তরের সভাকক্ষে মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশেও এ চিকিৎসায় খরচ অনেক কম। কিন্তু আমাদের দেশে কেন এত বেশি হবে? এ বিষয়টি ভালো করে দেখার সুযোগ রয়েছে। আমরাও পেসমেকার-ভাল্ব যে দেশগুলো থেকে আমদানি করি, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও সেসব দেশ থেকেই আমদানি করে। তাহলে দুই দেশের মধ্যে এত দামের ফারাক হবে কেন সেটি জানা খুবই জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত মেডিকেল ইকুইপমেন্টের দাম ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ঠিক করে দেওয়া রয়েছে। আমরা যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের থেকে আমদানির তথ্য নিলাম তখন দেখতে পেলাম ৩০ ডলার থেকে সাত হাজার ডলারের ইকুইপমেন্ট রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৩০ ডলারে ইমপোর্ট করে তিন লাখ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে কি না সেটি দেখতে হবে। এটি চাল ডালের ব্যবসা নয়, এটি জীবন রক্ষাকারী একটি পণ্যের ব্যবসা। এ ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা প্রয়োজন।’
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মেডিকেল ইকুইপমেন্টের বিষয়টি সরকারের একটি নির্দিষ্ট বিভাগ দেখছে। সাম্প্রতিক সময়ে এখানে কিছু অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। একটি প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত মূল্যের থেকে ৭০ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পেয়েছি। ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসেছি। কোনো পণ্যের আমদামি মূল্য কত, আর বিক্রয় মূল্য কী রাখা হচ্ছে, তা জানা প্রয়োজন।’
সোমবার দাম পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে এবং আগামী এক মাসের মধ্যে কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী অবস্থা জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। জীবন রক্ষাকারী এসব পণ্যে যেন মনোপলি তৈরি না হয় সেটিই তাদের প্রত্যাশা বলেও জানান ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ক্লিনিক শাখার সহকারী পরিচালক ডা. মো. মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা থেকে যেটি করে থাকি, জেলা হাসপাতাল থেকে বিশেষায়িত হাসপাতাল পর্যন্ত যন্ত্রপাতিগুলো ফলোআপ করি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল ডিভাইস বিশেষ করে স্ট্যান্টের দামগুলোর বিষয়ে নিয়মিত তদারকি করি। এ ক্ষেত্রে সমস্যাটা হলো প্রাইভেট হাসপাতালগুলো। সেগুলোর সঙ্গে আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর একটি মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকে। তারা নিজেরা ইচ্ছেমতো দাম দিয়ে সেগুলো কেনাকাটা করে এবং বিক্রিও সেই অনুযায়ী একটা দাম নির্ধারণের মাধ্যমে করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে সমস্ত যন্ত্রপাতি টেন্ডারের মাধ্যমে কেনাকাটা করতে হয়। তবে স্ট্যান্ট ও পেসমেকারের ক্ষেত্রে কোনো টেন্ডারে হয় না। এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের একটু ভাবা যেতে পারে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে হাসপাতালগুলোতে যাই, ক্যাথল্যাবগুলো দেখি এবং নিয়মিত মনিটরিং করার চেষ্টা করি। বিশেষ করে হৃদরোগ হাসপাতালেও যেন এ ধরনের কেনাকাটাসহ সমস্ত কাজগুলো সুষ্ঠু ভাবে হয়, সেগুলো আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখব।’
ডা. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব কোনো ভাবেই যেন রোগীর স্বার্থ ব্যাহত না হয়। তাদের স্বার্থ সংরক্ষণই আমাদের মূল দায়িত্ব।’
বাংলাদেশ মেডিকেল ডিভাইস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের দামের পার্থক্য আছে এটা ঠিক, তবে আমরা পুরোপুরি আমদানি নির্ভর হলেও তারা নয়। ভারতে পর্যাপ্ত স্ট্যান্ট তৈরি হয় বিধায় তারা কম মূল্যে রোগীদের দিতে পারে। তারা পাঁচ বছর আগেই স্ট্যান্টের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। এর বেশি রোগীদের থেকে নেওয়া যাবে না। কিন্তু আমাদের দেশে এমন কোনো পদ্ধতি নেই।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দেশ পুরোপুরি আমদানি নির্ভর, আমরা চাইলেই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিতে পারি না। তাছাড়া এই মেডিকেল ডিভাইসগুলো কেনার আগে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে আমাদের একটি অ্যাপ্রুভাল নিতে হয়। পাশাপাশি আমদানির পর ইনডেন্ট অনুযায়ী ইনভয়েসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হয়। সবশেষে একটা দাম নির্ধারণ করা হয়। যে কারণে এখানে মাত্রাতিরিক্ত দাম রাখার কোনো সুযোগ নেই।’
-এসআর