ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবরের পর থেকে বাংলাদেশের বাজারে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। শুল্ক আরোপের খবরের আগে ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হতো ৬০ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, দাম বৃদ্ধির উত্তাপ দেশি পেঁয়াজের উপরেও পড়েছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরের দেশি পেঁয়াজ এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা।
হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বিভিন্ন আড়তে মনিটরিংএ নামে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তিনটি টিম দিয়ে এই মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
রাজধানীর শ্যামবাজারে পেঁয়াজের আড়তে অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং শরীফুল ইসলাম।
এ সময় পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রয় মূল্য, ক্রয় রশিদ, বিক্রয় রশিদ, এলসিকৃত পেঁয়াজের চালান যাচাই বাছাই করা হয়।
অভিযানে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানায়, ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে যে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, সেই পেঁয়াজ গত ২১ অগাস্ট থেকে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। এতে করে ভারতের আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে দেশি পেঁয়াজের দাম পাইকারি পর্যায়ে খুব একটা বাড়েনি।
অভিযানের বিষয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘আমরা আজ শ্যামবাজারে এসে যাচাই-বাছাই করে দেখলাম যে এক সপ্তাহ আগে পেঁয়াজের দাম কেমন ছিল আর এখন কেমন দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা আজ দেখলাম, ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ১৪ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বেড়েছে। তবে গত দুই দিন আগে যে দাম ছিল আজকে দামটা কিছুটা কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন যে এই দাম দুই/একদিনের মধ্যে আরও কমে যাবে। আড়তে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মুজুত রয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় ক্রেতা নেই।’
৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পেঁয়াজ কি বাংলাদেশে এসেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। ব্যবসায়ীরা যে কাগজ দেখালেন এবং তাদের ভাষ্যমতে গত ২১ অগাস্ট থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে। এ কারণে তুলনামূলক আগের থেকে দাম বেশি। বর্তমানে আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪৭ টাকা থেকে ৫১ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৭ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।’
দেশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা যেটা জানিয়েছে, যে তাদের যেহেতু ক্রয় মূল্য বেশি তাই বাধ্য হয়ে তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন।’
বর্তমানে দাম কি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ক্রয়ের যে কাগজপত্র, এলসির যেসব কাগজপত্র পেয়েছি সব আমরা নিয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে।’
অনেক ব্যবসায়ীকে দেখলাম ক্রয়ের রশিদ নেই? তাদের বিরুদ্ধে কি বলবেন.. এমন প্রশ্নে এই ভোক্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘বিক্রি করার সময় যে ক্যাশ ম্যামো দেওয়ার বিধান ছিল সেটি দিচ্ছেন কিন্তু সেই ক্যাশ ম্যামোতে শুধু ক্রেতার নাম লেখা থাকছে কিন্তু ঠিকানা বা যোগাযোগ নাম্বার থাকছে না। এ রকম অসামঞ্জস্য পাওয়া যাচ্ছে। একইসঙ্গে যে পোর্ট থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করা হয়েছে সে সমস্ত কোনো কাগজপত্র তারা দেখাতে পারছে না। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই পেঁয়াজগুলো ক্রয় করেছেন তারা। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছি, যদি এরপরেও এমন কার্যক্রম চালিয়ে যায় তবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ব্যবসায়ীরাও আমাদের কাছে ওয়াদা করেছেন যে তারা এরপর থেকে ক্যাশ ম্যামো রাখবেন।’
আজ কোনো ব্যবস্থা নিলেন না কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আজকে আসলে ব্যবসায়ীরা কি দরে বিক্রি করছে, কেমন লাভ করছে, দাম কত বৃদ্ধি পেল, কেন বৃদ্ধি পেল এসব বিষয়ে তদারকি করছি। এছাড়া ব্যবসায়ীরা জানালেন, গত দু-দিন আগের ক্রয়কৃত পেঁয়াজ আজ ক্রয় মূল্যের থেকে কম মূল্যে অর্থাৎ লস করে বিক্রি করছেন। এ সকল কারণে আজকে আমরা শুধু মনিটরিং করলাম।
-এসআর