ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: সরকারি সংস্থাগুলো সঠিক জায়গায় তদারকি করে না। শুধু কয়েকটা বাজারে গিয়ে লোক-দেখানো তদারকি চালানো হয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ভবনে ডিম, ব্রয়লার মুরগি, আলু ও পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক মুনাফা করার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই’র প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ’বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নিত্যপণ্যের কিছুটা মূল্যবৃদ্ধি হয়। তবে বর্তমানে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভোক্তাদের অস্বস্তিতে ফেলেছে। সরবরাহ ব্যবস্থায় কয়েক ধাপে পণ্য হাত বদলের কথা আমরা শুনেছি। অনাবশ্যক হাত বদল কমিয়ে কিভাবে যৌক্তিক মূল্যে পণ্য ভোক্তার কাছে পৌছে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
অন্তর্বতী সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে বাজারে ডিমসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানান জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল। সরবরাহ সংকটও কমতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এতে বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, সরকারি সংস্থার অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। তারা সঠিক জায়গায় তদারকি করে না। শুধু কয়েকটা বাজারে গিয়ে লোক-দেখানো তদারকি চালানো হয়।
এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক জালাল উদ্দীন বলেন, দাম না কমালে বেকারিতে ডিম ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হবে। এতে আগামীতে কেকসহ অন্যান্য আইটেমে কোনো ডিম পাবে না ভোক্তারা।
তিনি বলেন, আমন্ত্রণ জানানো স্বত্বেও ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত নেই। এতে বোঝা যায়, ডিম উৎপাদকদের মধ্যে ঝামেলা আছে। এদের না ধরে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা শুধু খুচরা পর্যায়ে অভিযান চালান। ফলে অস্থিরই থেকে যায় বাজার।
সভায় কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, পাইকারদের পাশাপাশি কাজী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশকে দেশের আনাচে-কানাচে থাকা তাদের রিটেইল আউটলেটগুলোতে ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে ডিম বিক্রি শুরু করতে হবে। এতে বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়বে, দামও কমবে। এতে ভোক্তারাও স্বস্তি পাবে।
তবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যাপ্ত সরবরাহ করলে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে খুচরা পর্যায়ে ৪৮ টাকা হালি ডিম বিক্রি করা সম্ভব হবে। এ কথা জানিয়ে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, তেজগাঁও আড়তে দৈনিক ডিমের চাহিদা ২০-২৫ লাখ পিস। বিপরীতে করপোরেট কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ১০ লাখ ডিম। বাড়তি ডিম বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যাপ্ত সরবরাহ করলে শুক্রবার প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করা যাবে ১৫০ টাকায়। সে অনুযায়ী পাইকারি পর্যায়েও দাম রাখা হবে।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীবৃন্দ, বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতৃবৃন্দ, বাজার বিশ্লেষক এবং সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র মহাসচিব মো. আলমগীর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের পরিচালক ড. উম্মে বিনতে সালাম, শ্যামবাজার কৃষি পণ্য আড়ত বণিক সমিতির সহ-সভাপতি হাজী মো. মাজেদ, কারওয়ান বাজার পাইকারি কাঁচাবাজার আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান চৌধুরীসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
এবি