রাজশাহীতে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করায় বিকেল ৫টা বাজতেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সব দোকানপাট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এতে আমের বাজারে মানুষ কমছে। তবে অনলাইনে আমের বেচাকেনা জমে উঠেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অবসর সময়ে অনলাইনে আমের ব্যবসায় ঝুঁকেছেন শিক্ষার্থীরা।
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে গ্রুপ, পেজ ও ওয়েবসাইট খুলে সমানতালে আমের প্রচার- চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সুবাদে লাইভ করে বাগানের আম দেখানো, আম নামানো এবং প্যাকেটিং কার্যক্রম দেখিয়ে নানাভাবে সব ধরনের ক্রেতাদের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন। এই ফেসবুকের মাধ্যমেই ঢাকাসহ দেশের জেলার গ্রাহকরা পছন্দ অনুসারে আম কিনতে পারছেন। কেনার পর তারা প্রাপ্ত আম নিয়ে অনলাইনে মন্তব্যও করছেন।
এবার রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ১৯ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। স্থানীয় আম ব্যবসায়ীরা জানান, বিগত সময়ে অনলাইনে আমের বেচাকেনা ছিল না। এবার তরুণ শিক্ষার্থীরা ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপ ও ওয়েবসাইটসহ নানা মাধ্যমে আম বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্ডার নিচ্ছেন। ফলে ভিড় বাড়ছে রাজশাহীর বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস ও রেল স্টেশনসহ ঢাকাগামী বাস টার্মিনালে। আর অর্ডার নেয়া আম কার্টনে প্যাকিং করে চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। অনলাইনে ব্যবসার ফলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে চাষীরা পাচ্ছেন আমের ন্যায্যমূল্য। আর ভোক্তারা অল্প সময়ের মধ্যে পাচ্ছেন চাহিদা অনুযায়ী ফরমালিনমুক্ত সুস্বাদু ও পরিচ্ছন্ন আম জানান, রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
মনু মোহন বাপ্পা নামের এক ছাত্র জানায়, লকডাউনের ছুটিতে চলে গেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরের বসনইল গ্রামে। গ্রামে থেকে আমের ব্যবসা করছেন। অনলাইনেই বিক্রি করছেন বেশিরভাগ আম। ‘রেইনবো ম্যাঙ্গো স্টেশন’ নামে তার একটি ফেসবুক পেজ আছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত তিনি অনলাইনে ৭০ মণ গোপালভোগ ও খিরসাপাত আম বিক্রি করেছেন। বাপ্পা বলেন, আমাদের নিজস্ব ১০০ বিঘা আমের বাগান আছে। তারপরও খিরসাপাত আর ল্যাংড়ার ৬০০টির মতো গাছের শুধু আম কিনে নিয়েছি। এছাড়া ফজলি, আম্রপালি, বারি-৪ আর আশ্বিনা আম আছে পর্যাপ্ত। স্থানীয় চাষীদের কাছ থেকেও আম কিনে থাকি। ফলে চাষীরাও লাভবান হন। কারণ চাষীদের হাটে আম নিয়ে গেলে খাজনা দিতে হয়। আবার দামও কম পান। আড়তদাররা আবার সেই আম বিক্রি করেন আম ব্যবসায়ীদের কাছে। সেই আম কয়েক হাত ঘুরে যেত ভোক্তার কাছে। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীদের আমে ফরমালিন দিতে হয়। অনলাইনে বিক্রির ফলে সরাসরি বাগান থেকে আম প্যাকেট হয়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছে যায়। ফলে টাটকা ফরমালিনমুক্ত সুস্বাদু মিষ্টি রসালো আম পেয়ে যান ভোক্তারা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কে জে এম আবদুল আউয়াল বলেন, জেলায় এ বছর ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আছে। আমের উৎপাদনও ভাল হয়েছে। করোনায় অনেকে অনলাইনে আম ক্রয় করছেন। কুরিয়ারের মাধ্যমে আম পাঠানোটা একটা ভাল দিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেনে আম পাঠানোর সুযোগ হওয়ায় ভাল হয়েছে।