পুলিশ সদর দফতরের সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেনের ল’ ফুল ইন্টারসেপশান সেলে (এলআইসি) গড়ে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক নারীর অভিযোগ জমা পড়ছে। এই শাখার কার্যক্রম শুরুর সাড়ে ১০ মাসে ফেসবুক মেসেঞ্জারে ১৬ হাজার ৩৩১টি, হটলাইনে ২৬ হাজার ৮৪টি ও ইমেইলের মাধ্যমে ৩৬১টি অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ায় ভুক্তভোগীদের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে এই শাখাটি।
একদিকে যেমন অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে, অন্যদিকে ভুক্তভোগী এবং সংশ্লিষ্টদের মোটিভেশনের কাজ করে যাচ্ছে পুলিশের এই ইউনিটটি। ইমেইল, হটলাইন, মেসেঞ্জারের মাধ্যমে নারী ও শিশুদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে সাইবার অপরাধের আওতাধীন বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে সমাধানে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যেকোনও একটি মাধ্যম ব্যবহার করে নারীরা অভিযোগ জানাতে পারছেন। সাইবার অপরাধীদের শনাক্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ সদর দফতর বলছে, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে পুলিশ সদর দফতরের তত্ত্বাবধানে চালু হয় সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন এলআইসি শাখা। প্রায় সাড়ে ১০ মাসে পেরিয়ে ৩১ সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত ফেসবুক মেসেঞ্জারে ১৬ হাজার ৩৩১টি, হটলাইনে ২৬ হাজার ৮৪টি ও ইমেইলের মাধ্যমে ৩৬১টি অভিযোগ এসেছে। অনেকেই একাধিক মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন বা একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। ইমেইল ও হটলাইনে ফোন করে যোগাযোগ করা সেবাপ্রত্যাশীদের অনেকেই পুনরায় ফেসবুক মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন। ফলে এসব বিষয় বিবেচনায় তালিকাভুক্ত সেবাপ্রাপ্তির সংখ্যা ১৬ হাজার ৩৩১ জন। এসব অভিযোগের মধ্যে ১ হাজার ৯৩৬টি অভিযোগের অভিযোগকারী সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এছাড়া, ৪ হাজার ২০৯টি নন-সাইবার অপরাধ ও পুরুষ সেবাপ্রত্যাশী থেকে পাওয়া অভিযোগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিটে এ সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। নারীদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগ বিচার-বিশ্লেষণ করে ৮ হাজার ৯৩টি অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে ৩ হাজার ১৬৬ জন প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া, ৮৬৩ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং এই অভিযোগগুলো অনুসন্ধানে রয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে আরও জানা গেছে, ১৬ হাজার ৩৩১টি অভিযোগের ধরণ সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফেইক আইডি বিষয়ক ৪ হাজার ১৩২টি যা মোট অভিযোগের ২৫ ভাগ, আইডি হ্যাক নিয়ে ১ হাজার ১৪৮টি যা মোট অভিযোগের ৮ ভাগ, ব্ল্যাকমেইলিং নিয়ে ১ হাজার ৫৯৮টি যা মোট অভিযোগের ১০ ভাগ, মোবাইলে হয়রানি নিয়ে ১ হাজার ৮৪টি যা মোট অভিযোগের ৭ ভাগ, অশ্লীল কনটেন্ট পাঠানো নিয়ে ৮৭৩টি যা মোট অভিযোগে ৫ শতাংশ, অপ্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে ৪ হাজার ৫২০টি যা মোট অভিযোগের ২৭ ভাগ, অন্যান্য বিষয়ে নিয়ে ২ হাজার ৯৭৬টি যা মোট অভিযোগের ১৮ ভাগ।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে পরবর্তী এক মাসে অভিযোগ আসে ৩ হাজার ১টি, ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী এক মাসে ১ হাজার ৫১৮টি। কোভিডকালে চলতি বছরের জুলাই মাসে অভিযোগ আসে ১ হাজার ২৪১টি, আগস্ট মাসে ২ হাজার ৭৭৯টি এবং সেপ্টেম্বর মাসে আসে ১ হাজার ৭০৮টি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী বলেন, সাইবার বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার কারণে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেনের ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইমেইল এবং হটলাইনের মাধ্যমে তারা সহায়তা প্রত্যাশা করেন। পরবর্তী সময়ে এই শাখা থেকে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় তথ্য থেকে নেওয়া হয়। আইনি সহায়তা পেতে জিডি ও মামলা করার কথা বলা হয়। আমরা সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে তাদের কথামতো আইনি সহায়তা গ্রহণ করি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ও তাদের মোটিভেশনে আমাদের মনোবল আরও শক্ত হয়েছে। এক পর্যায়ে আমরা ভেঙ্গে পড়েছিলাম। ভুক্তভোগীদের অনেকে আবার পুলিশের পক্ষ থেকে রেসপন্স পায়নি বলেও ক্ষোভ জানান।
দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, ফেসবুক পেইজ, মেসেঞ্জার, হটলাইন নাম্বার এবং ইমেইলের মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি প্রত্যাশিত সেবার ক্ষেত্রে তথ্য পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও আইনি সহযোগিতা করা হয়েছে ও হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে মামলা, পরামর্শ এবং সংশ্লিষ্ট লোকাল ইউনিটের সাথে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়েছে। নারীর জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস বিনির্মাণে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান কর্মকর্তারা।
পুলিশ সদর দফতরের সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন ল’ফুল ইন্টারসেপশান সেলের এআইজি মীর আবু তৌহিদ বলেন, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে পুলিশ ফাইবার সাপোর্ট ফর ওমেনের শাখার কার্যক্রম শুরুর দিকে অনেকেই সাইবার বিষয়ক অভিযোগ ছাড়াও অনেক ধরনের অভিযোগ করে আসছিলেন। তাই সংখ্যাটি ছিল বেশি। বর্তমান সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি, সুনির্দিষ্ট সাইবার বিষয়ক অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে নারীরা আমাদের শরণাপন্ন হচ্ছেন। আমাদের এখানে যেসব প্রথাগত অপরাধ রয়েছে এসবে ভুক্তভোগীদের আচরণ এবং সাইবার বিষয়ক ভুক্তভোগী বিশেষ করে মেয়েরা ‑ তাদের সবার আচরণ এক ধরনের নয়। কারণ এখানে সামাজিক-পারিবারিক অনেক বিষয় রয়েছে, অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
তিনি বলেন, অনেকে ভুক্তভোগী হলেও সামনে আসতে চান না। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী আমরা মামলা করতে গেলে অনেকেই অনীহা প্রকাশ করেন। আমরা এসব বিষয়ে ভুক্তভোগী ও এ সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যদের মোটিভেশন করছি। আমাদের এখানে অভিযোগ করলেও দেশের যেকোনও জায়গায় সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে বিষয়গুলোর সমাধান করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি থানায় নারী ও শিশু বিষয়ক হেল্প ডেস্ক করা হয়েছে। সেখান থেকেও অনেকে সহায়তা পাচ্ছেন। হেল্প ডেস্কের মধ্যেও আমাদের এই কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যারা এই হেল্প ডেস্কগুলোতে কাজ করছে তাদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
ভুক্তভোগীরা যেভাবে সহায়তা পাবেন
সাইবার সংশ্লিষ্ট যেকোনও ধরনের অপরাধের সহায়তার জন্য ফেসবুক পেইজ police cyber support for women PCSW, পেইজের মেসেঞ্জার, ইমেইল [email protected], হটলাইন +8801320-000888 ব্যবহার করে অভিযোগ জানাতে পারছেন ভুক্তভোগীরা।