ভেক্তাকন্ঠ ডেস্ক
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জনবল সংকট রয়েছে। ফলে কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে বলে জানাগেছে।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ২৫ মার্চ থেকে চলছে এটি। এখন ৩৫টি মামলায় বিচার কার্যক্রমসহ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে শুনানির জন্য। এর মধ্যে ছয়টি মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন, ছয়টি মামলায় সাক্ষ্য শেষ পর্যায়ে, একটিতে চার্জগঠনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে এবং আটটি মামলা রয়েছে চার্জ গঠনের শুনানির জন্য। এর মধ্যে আরও আটি মামলা বিচার শুরুর অপেক্ষায়।
স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর ২০১০ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এরপর আসামির সংখ্যা ও মামলার চাপ বেড়ে যাওয়ায় আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ট্রাইব্যুনাল-২ নামে দুটি ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম চলে। এরপর ২০১৫ সালে ট্রাইব্যুনাল-২ নিষ্ক্রিয় করে ট্রাইব্যুনাল-১ বিচারকাজ চালিয়ে যায়। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর দুই ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করে করা হয় আরও একটি ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল থেকে গত ১১ বছরে মোট ৪৩টি মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে দণ্ডিত আসামির সংখ্যা শতাধিক। এর মধ্যে রায়ে ৭১ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড, ২২ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং খালাস পেয়েছেন একজন।
বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে যোগদান করার পর ট্রাইব্যুনাল সচল হয়। প্রথমদিন বিভিন্ন ধরনের ১৮টি মামলায় প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ও দিন ধার্য করেন। এরপর গত প্রসিকিউশনের আবেদনে বৃহস্পতিবার ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ হয়। এর মধ্যে ছয়জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এর আগে থেকেই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার।
এখন যেসব মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে এগুলোসহ সব মামলার কার্যক্রমই চলবে। নতুন মামলা এলে সেসব বিষয়ে শুনানি হবে। এক কথায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আবারও আগের মতোই চলবে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর বিচার চললেও ২০১৩ সাল থেকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে মোট ৪৩টি মামলার রায় আসে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও ৩৬টি মামলা বিচারাধীন। যার একটি ময়মনসিংহের। এরই মধ্যে ৭৮টি মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। এদিকে ট্রাইব্যুনালের রায়ের পরে ৯টি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। আরও দুটি মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
বিচারাধীন ৩৫টি মামলা: মামলাগুলোর মধ্যে যথাক্রমে ছয়টি মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন, ছয়টি মামলার সবশেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) সাক্ষ্যগ্রহণ করার জন্য রয়েছে। ৯টি মামলায় সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরার কার্যক্রম চলছে। সাক্ষী গ্রহণের জন্য তিনটি মামলা প্রস্তুত করা হয়েছে, চার্জ গঠনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে একটি মামলা এবং আটটি মামলা রয়েছে ফরমাল চার্জ পর্যায়ে।
রাষ্ট্রপক্ষের একাধিক আইনজীবীর তথ্যমতে, বিচার ও প্রাক্-বিচার পর্যায়ে থাকা ৩৫টি মামলায় আসামির সংখ্যা ২২৭। এর মধ্যে কারাগারে ১২৩ জন, পলাতক ৭৯ জন। ১৯ জন এরই মধ্যে মারা গেছেন। বাকি চারজন জামিনে আছেন। অন্য দুজন স্বেচ্ছায় ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করেন, তারাও কারাগারে।
এখন পর্যন্ত তদন্ত সংস্থায় অভিযোগ এসেছে ৭৭৮টি, যার মধ্যে ৭৮টি অভিযোগের তদন্ত শেষ হয়েছে। ২৭টি অভিযোগ তদন্তাধীন, যাতে আসামির সংখ্যা ৩৮ জন। এর বাইরে ৩ হাজার ৮৩৯ জনের বিরুদ্ধে থাকা ৬৯৪টি অভিযোগ গ্রহণ করেছে তদন্ত সংস্থা, যা তদন্ত শুরুর অপেক্ষায়।
ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করার বিষয়ে সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালের তিনজন মেম্বারের (বিচারপতির) একজন (বিচারপতি আমির হোসেন) মারা যাওয়ার পর ওই পদটির শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। হাইকোর্টের বিচারপতি কেএম হাফিজুল ইসলামকে সরকার নিয়োগ দেওয়ার পরে তিনি যোগ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সচল হয়েছে এবং কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। আমরাও আমাদের কার্যক্রম করে যাচ্ছি।
খবর: জাগো নিউজ