করোনাকালীন এ বছরের বেচাকেনা অন্য যেকোনো বছরের ভরা মৌসুমের তুলনায় অনেক কম। মানুষের হাতে টাকা না থাকায় বাড়তি ফল কেনা থেকে দূরে থাকছেন অনেকে।
আগে যে ক্রেতাদের কাছে ক্যারেটে ক্যারেটে ফল বেচতাম, এখন তার কাছে ৫ কেজি ১০ কেজি ফল বিক্রি করছি। করোনার সময় কেউই বাড়তি টাকা খরচ করতে চাচ্ছে না। আর এখানে সেখানে মৌসুমি ফলের উপহার দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে এবং আগে বিভিন্ন কোম্পানি প্রচুর ফল কিনতো ক্লায়েন্টদের বাসায় বা অফিসে উপহার দেয়ার জন্য। এবার এমন অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরায় টুকটাক ফল বিক্রি হচ্ছে , এমনটাই বলেন কাওরান বাজারের ফল বিক্রেতা হামিদ মিয়া।
এক ক্রেতা বলেন, প্রতিবছর প্রচুর ফল কিনে ঢাকার আত্মীয়-স্বজনের বাসায় পাঠাতাম। এ বছর তেমন কিনছি না। করোনার মধ্যে এসব বাড়তি ঝামেলা করা যাবে না। নিজের বাসার জন্য শুধু নিচ্ছি।
আম ব্যবসায়ী বলেন, কাল রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে ল্যাংড়া আমের মণ বিক্রি হয়েছিল ১১০০-১৩০০, ক্ষীরশাপাত ১৪০০-১৮০০ ও গোপালভোগ ১৫০০-২২০০ টাকায়। ওই আমগুলো আজ ঢাকায় এনে বিক্রি করছি। মণ প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দামে।আমের পরিবহন খরচ অনেক বেশি। আর আধপাকা বা কাঁচা আম পরিবহনের সময় অনেকটাই নষ্ট হয়। তাই গ্রাম থেকে শহরে আমের দামের পার্থক্য থাকে বেশি।
তাছাড়া কয়েক দিন সকালে টানা বৃষ্টি হচ্ছে, সেই দিনগুলোতে ফলের দাম কিছুটা কম থাকে।
রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। এরমধ্যে গোপালভোগ, ফজলি আর আম্রপালি আমের দাম একটু বেশি। আর ক্ষীরশাপাত লক্ষণভোগের দাম আম কিছুটা কম। তবে এর থেকেও কম দামে আম বিক্রি করতে দেখা গেছে ভ্রাম্যমাণ কিছু বিক্রেতাদের। তারা প্রতি আড়াই কেজি আম ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
তবে বাজারে আমের চাহিদা কম থাকলেও এ বছর অনলাইনে আমের বিক্রি ভালো হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমের ব্যবসায় নেমেছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্যোক্তা ও খুচরা আম ব্যবসায়ীরাও অনলাইনে আম বিক্রি করছেন।
রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম অনলাইনে বেচাকেনা হচ্ছে। তবে রাজশাহীর আম সবচেয়ে বেশি অনলাইনে বেচাকেনা হচ্ছে। রাজশাহীর ছোট বড় প্রায় সাড়ে ৫০০ ব্যবসায়ী সরাসরি ও অনলাইনেও ব্যবসা করছেন বলে জানিয়েছেন এক ব্যবসায়ী।
অনলাইনে আমের ব্যবসা করছেন রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, অনলাইনে আমের ব্যবসা লাভজনক। আমার বাসা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। কিন্তু আমি ঢাকায় থাকি। ঢাকা থেকেই অনলাইনে প্রচারণা চালিয়ে অর্ডার নিচ্ছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে থাকা আত্মীয়-স্বজন কুরিয়ারযোগে আম পাঠিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে অনলাইনে আম বিক্রি করছেন। তার দাবি, গত দুই বছর থেকে এ বছরে অনলাইনে আমের চাহিদা বেশি বেড়েছে।ফেসবুকে বিভিন্ন পরিচিতজন ও অফিস-আদালতের মানুষ অর্ডার দিচ্ছে। আগে যারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নিজে আম কিনতেন, তারা করোনার কারণে যাচ্ছেন না। পরিচিতদের মধ্যে জেনেশুনে নিচ্ছেন।