স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ সব সময় গুরুত্বহীন থাকলেও করোনা বদলে দিয়েছে বাস্তবতা। এবার তাই ভালোই গুরুত্ব পেয়েছে এ খাত। বরাদ্দ পাচ্ছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। যা বিগত যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি। বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথমবারের মতো মোট বাজেটের ৭ শতাংশের বেশি বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য। গত সাত অর্থবছরে এই খাতের বরাদ্দ কখনও ৫ শতাংশের ওপরে যায়নি।
তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ছে তিন হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। যা ছিল মোট বাজেটের ৫.২ শতাংশ। আগামী বাজেটে এটি হচ্ছে ৭.৪ শতাংশ। যা আবার জিডিপির ১.৩ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে অর্থনীতি সচল থাকবে। তবে এ খাতে সুশাসনও নিশ্চিত করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, স্বাস্থ্য ভেঙে পড়লে সবই ভেঙে পড়বে। এখন সবার আগে টিকা দরকার। এজন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এই খাতে সুশাসনও প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষ যাতে এই বাজেটের সুফল পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা কেনা বাবদ সরকার চলতি অর্থবছর ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রেখেছে। আগামী বাজেটেও একই পরিমাণ থোক বরাদ্দ রাখা হবে।
জানা গেছে, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যেও আগামী বাজেটে সুখবর থাকছে। দেওয়া হতে পারে বিশেষ প্রণোদনা। সরকারি হাসপাতালগুলোকে করা হবে আরও আধুনিক। এ ছাড়া নতুন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীও নিয়োগ দেওয়া হবে।
নতুন অর্থবছরে সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সরঞ্জাম বাড়ানো হবে। ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ জন্য এসব সরঞ্জাম আমদানি শুল্কমুক্ত রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আগামী অর্থবছরে করোনা মোকাবিলায় দুই হাজার চিকিৎসক, ছয় হাজার নার্স ও ৭৩২ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। এর জন্য বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে।
আরও জানা গেছে, চলতি বাজেটে করোনা চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসকদের এককালীন সম্মানি ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আগামী বাজেটে সম্মানি ভাতার পাশাপাশি দেওয়া হতে পারে ঝুঁকি ভাতা ও প্রণোদনা। এর জন্য বরাদ্দ থাকছে ৮৫০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হতে পারে। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ চার হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা।
স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে আধুনিক সেবা ও অনলাইনে বিশেষায়িত সেবার মান বাড়াতে এ খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে। চলতি অর্থবছর এ খাতে ১৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী বাজেটে তা ২০০ কোটি টাকা করা হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের স্বাস্থ্য খাত উন্নয়নে গবেষণার জন্য আগামী বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে।
জানা গেছে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। এখন পর্যন্ত বাজেটে মোট স্বাস্থ্য ব্যয় জিডিপির ২.৩৪ শতাংশ। মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় মাত্র ১১০ ডলার।
বাজেট তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক অর্থবছর ধরেই স্বাস্থ্যে বরাদ্দ মোট বাজেটের ৫ শতাংশের ঘরে আটকে আছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। এটি ওই অর্থবছরের মোট বাজেটের ৪.৯২ শতাংশ। তার আগের বছরে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা (৫.০৫ শতাংশ)। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ২০ হাজার ১৪ কোটি টাকা (৫.৩৯ শতাংশ)।
আগামী ৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে যে বাজেট বক্তৃতা দেবেন, সেখানে স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত থাকবে।