।। টেলিযোগাযোগ ডেস্ক ।।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনেকগুলো সুখবর দিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ইন্টারনেটের গতি, মান ও সেবা নিয়ে এতদিন গ্রাহকদের নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু বিপরীতে কিছু নির্দেশনা ছাড়া কোম্পানিগুলোকে সঠিক সেবাদানে বাধ্য করতে এতদিন আর কিছুই করেনি সরকার। এবার বিটিআরসি সেই অভাব পূরণে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বড় ব্যাপার হলো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন গতি বেঁধে দিয়েছে বিটিআরসি। এখন থেকে ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ডাউনলোড গতি হবে ১০ মেগাবিট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস)। অন্যদিকে আপলোডের গতি থাকতে হবে এক এমবিপিএস। ৯ ডিসেম্বর জারিকৃত ‘এএনএস অপারেটরস কোয়ালিটি অব সার্ভিস’ নামের এক বিধিমালায় এমন আদেশ দেয়া হয়েছে।
নতুন বিধিমালায় বলা হয়, এক মাসের গড় হিসাব ধরে ব্রডব্যান্ডের গতি ঠিক আছে কি না, তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। নির্ধারিত মানদণ্ড না মানলে অপারেটরদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিধিমালার মধ্যে আসায় এবার শাস্তির দিকে যাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে।
নতুন বিধির আওতায় অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস বা এএনএস অপারেটরদের (মোবাইল, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবাদাতা) নিয়ে আসা হয়েছে। নতুন বিধি অনুযায়ী মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতি টু–জির ক্ষেত্রে ৮০ কেবিপিএস (কিলোবিট পার সেকেন্ড), থ্রি–জির ক্ষেত্রে ২ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড) ও ফোর–জির ক্ষেত্রে ৭ এমবিপিএস হতে হবে। উল্লেখ্য, ফোর–জি লাইসেন্সের গাইডলাইনে ৭ এমবিপিএস গতির কথা বলা হয়েছিল, যা এখন বিধিমালায় এল।
মোবাইল ফোনের সফল কলের হার কমপক্ষে ৯৭ শতাংশ, কল ড্রপের হার ২ শতাংশের কম, সফল খুদে বার্তার হার ৯৮ শতাংশের বেশি হতে হবে। কল–সংযোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সময় হবে ৭ সেকেন্ড। টেলিফোন সেবার ক্ষেত্রে কল ড্রপ, কল সফল ও কল–সংযোগের সময়ও বেঁধে দেয়া হয়েছে মুঠোফোন অপারেটরদের মতোই।
বিধিমালায় আরও অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ের কথা উল্লেখ আছে। কথা কতটুকু পরিষ্কার শোনা যায়, তা মানের ভিত্তিতে পাঁচটি ভাগে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অপারেটরকে পাঁচের মধ্যে সাড়ে তিন নম্বরের ওপর পেতে হবে। এ ছাড়া কাস্টমার কেয়ারে ৯০ শতাংশ কল ৪০ সেকেন্ড ও শতভাগ কল ৯০ সেকেন্ডে ধরা এবং গ্রাহকের ৯০ শতাংশ অভিযোগ পাঁচ দিনের মধ্য নিষ্পত্তি করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এতে।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত অক্টোবর মাস শেষে মুঠোফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ কোটি ৬৪ লাখ। ৯০ দিনের মধ্যে কেউ কোনো সিম ব্যবহার করে কথা বলা, খুদে বার্তা পাঠানো অথবা ইন্টারনেট ব্যবহার করলে তাকে একজন ব্যবহারকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। এক একটি সক্রিয় সিমকে একজন ব্যবহারকারী হিসেবে গণ্য করা হয় এ হিসাবে।
সে হিসাবে, অক্টোবর শেষে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ কোটি ২৫ লাখে। এর মধ্যে প্রায় ৮ কোটি ৬৭ লাখ মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বাকিরা অন্যান্য মাধ্যমে ইন্টারনেট–সেবা নেয়। এ ক্ষেত্রেও ৯০ দিনে একবার ইন্টারনেটে প্রবেশ করলে তাকে ব্যবহারকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে মুঠোফোন গ্রাহকদের জন্য ফোর–জি সেবা চালু হয়।
বিটিআরসির এই নতুন ঘোষণা টেলিযোগাযোগ খাতে ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র, কল সেন্টারের কর্মকর্তারা জানান, টেলিযোগাযোগ খাতে ভোক্তারা যদি কোন অন্যায় বা প্রতারণার শিকার হন, তাহলে তারা কল সেন্টারের সহায়তা নিয়ে ক্ষতিপূরণ ও প্রতিকার পেতে পারেন। ভোক্তা অধিকার এইন অনুযায়ী এ সেবা দেবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
কলসেন্টারে অভিযোগ করতে চাইলে [email protected] ইমেইল পাঠান, কিংবা ফোন করুন ০১৯৭৭০০৮০৭১, ০১৯৭৭০০৮০৭২ নম্বরে। সরাসরি যাওয়ার ঠিকানা হলো ১৯/১ পান্থপথ, কনকর্ড টাওয়ার, ঢাকা ১২০৫।
।