ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক
ব্যবসায়ীরা বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকেন ঈদের। দেশে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য বরাবরই ভালো হলেও গত দুই বছরে চারটি ঈদের চিত্র ছিল ভিন্ন। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে কঠোর বিধিনিষেধে ঈদের আগে মার্কেট খুলতেই পারেননি ব্যবসায়ীরা। অল্প সময়ের জন্য মার্কেট খুললেও মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় বেচাকেনা ছিল খুবই কম। ফলে গুনতে হয়েছে বড় লোকসান।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবার ঈদুল ফিতর ঘিরে ভালো ব্যবসার প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়। বড় লাভের স্বপ্ন দেখছেন রাজধানীর ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। নেই বিধিনিষেধও। ফলে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য জমজমাট হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সবার একটাই লক্ষ্য—করোনাকালে ঈদে যে লোকসান হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা। তবে এখনো ঈদের বাজার জমেনি বলে জানিয়েছেন রাজধানীর ব্যবসায়ীরা। স্বাভাবিক সময়ের মতো চলছে বেচাকেনা। তবে হঠাৎ বাজারে সব ধরনের পোশাকের দাম কিছুটা বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়বে।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এবার ঈদের অর্থনীতি বড় হবে বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতারাও। সমিতির নেতারা বলছেন, ঈদুল ফিতরে এবার খুচরা বাজারে ১০-১২ হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হবে।
রাজধানীর নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এখনো ঈদের বাজার জমেনি। স্বাভাবিক সময়ের মতো চলছে বেচাকেনা। ঈদের সঙ্গে সম্পর্কিত কেনাকাটা এখনো শুরু করেনি মানুষ। রমজানের ১০ দিন পার হলে ঈদের কেনাবেচা শুরু হতে পারে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজের সামনের গলিতে ফুটপাতে পোশাক বিক্রি করেন ব্যবসায়ী আমিনুল হক। তবে এখন ক্রেতা নেই একেবারেই। মোবাইলে গেম খেলে অলস সময় কাটছে তার। আমিনুলের প্রত্যাশা, রোজা ১০-১২টা পার হলে বেচাকেনা শুরু হবে।
নিউমার্কেটের ফুটপাতে পোশাক বিক্রি করেন বিপ্লব হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেচাকেনা টুকটাক চলছে। আশা করছি ৮-১০ রোজার পর ব্যবসা জমবে। যারা আসছেন, দর-দাম করে চলে যাচ্ছেন। ঈদের এখনো অনেকদিন বাকি থাকায় মানুষ কিনছে কম।’
তিনি বলেন, ‘ফুটপাতে ২০১৮-২০১৯ সালেও ঈদে প্রতিদিন তিন-চার হাজার টাকার বেচাকেনা করতাম। তবে করোনায় গত দুই বছরে চারটি ঈদ পুরোপুরি লোকসানে গেছে। এবার তো পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক। আশা করছি, বাড়তি বেচাকেনা হবে।’
নিউমার্কেটে এখন যারা কেনাকাটা করতে এসেছেন, তাদের অধিকাংশই ঈদ উপলক্ষে নয়। সাধারণ কেনাকাটার জন্য আসছেন ক্রেতারা। তবে কেউ কেউ অবসর সময়ে মার্কেটে ঘুরছেন, নতুন কালেকশন দেখার জন্য। তেমনি একজন সুরভী শোভা। কলাবাগান এলাকা থেকে এসেছেন তিনি। মার্কেট ঘুরে ঘুরে দেখছেন নতুন কী ধরনের পোশাক এসেছে।
সুরভী শোভা বলেন, ‘নিউমার্কেটের কিছু দোকানি অনলাইনে শাড়ির নতুন কালেকশন ছেড়েছেন। সেগুলো সরাসরি দেখতে এসেছি। অনলাইনে দেখানো শাড়ি সরাসরি দেখে যদি পছন্দ হয়, তবেই কিনবো। এছাড়া বাচ্চাদের জন্য কিছু কাপড় কিনবো।’
ব্যবসায়ী মো. রাসেল বলেন, ‘সবাই বাজারে আসা-যাওয়া করছেন। এখনো কেনার মনোভাব আসেনি। তবে গত দুই বছরের ঈদে ক্রেতা পাওয়া যায়নি। এবার যে ক্রেতারা আসছেন, সেটাই আশার দিক। আশা করছি, সামনে আরও বেশি ক্রেতা আসবেন, বেচাকেনা অনেক ভালো হবে।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির দাবি, আসন্ন রোজার ঈদে বেচাকেনা ভালো হবে। সব শঙ্কা কাটিয়ে এবার ১০-১২ হাজার কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হবে বলে আশা করছি। তবে যানজট ও চুরি ছিনতাই থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা যেন পরিত্রাণ পান, সেদিকটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিশ্চিত করতে হবে।
দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন
বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর রোজার ঈদের অপেক্ষায় থাকেন। সারাবছর যে ব্যবসা হয়, তার বড় অংশই আসে এ ঈদে। আমাদের হিসাবে এবার রোজার ঈদকেন্দ্রিক ১০-১২ হাজার কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেচাকেনা শুরু হবে দ্রুতই। তবে এক ঈদে গত দুই বছরের লোকসান পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ জীবন থেকে একবার যেটা যায়, সেটা আর ফিরে আসে না। বলতে পারি, ব্যবসায়ীরা সার্ভাইভ (টিকে থাকার লড়াই) করতে শুরু করবে। ঈদের সময় চুরি-ছিনতাই বাড়ে। এজন্য মার্কেটের সড়কে যেন পুলিশ টহল জোরদার করা হয়, সেই দাবি জানাচ্ছি।’