।। সংবাদ ডেস্ক ।।
রাজধানীর সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলার সহজ ও সাশ্রয়ী যোগাযোগের জন্য রয়েছে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন। কিন্তু ইদানীং ট্রেন দুটিতে ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীরা যারপরনাই বিরক্ত এবং হতাশ। কর্তৃপক্ষ বলছে, ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটি, লোকোমোটিভ ও জনবল সংকটের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এখন লোকাল ট্রেনগুলোও সময়মতো চলাচল করতে পারছে না।
লালমনিরহাট স্টেশন মাস্টার নিজাম উদ্দিন বলেন, যেভাবে ট্রেন চলাচল বেড়েছে, সেভাবে ট্রেন ক্রসিংয়ের জন্য স্টেশন ও রেলওয়ে লাইন স্থাপন করা হয়নি। কিন্তু ট্রেনযাত্রী বেড়েছে ব্যাপক হারে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। খবর বণিক বার্তা’র।
রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিতে লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার পাশাপাশি কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও বগুড়া জেলার লোকজন যাতায়াত করে থাকে। নানা সমস্যা থাকার পরও সহজ ও সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে উত্তরবঙ্গের মানুষ দূরবর্তী গন্তব্যে ট্রেনকেই অগ্রাধিকার দেয়।
মাস কয়েক আগেও ট্রেন দুটি নির্ধারিত সময়ের থেকে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা দেরি করত। কিন্তু বর্তমানে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি হচ্ছে।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ ছাড়া বাকি দিনগুলোয় দুটি ট্রেন নিয়মিত ঢাকা যাতায়াত করে। কিন্তু ১৭ ফেব্রুয়ারি লালমনি এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়ে সোয়া ৩ ঘণ্টা দেরিতে রাত ১টা ২৫ মিনিটে। লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছে পরদিন দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ৩ ঘণ্টা ৫ মিনিট দেরিতে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যায়। অন্যদিকে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৪ ও ৬ ফেব্রুয়ারি অন্তত সোয়া ঘণ্টা দেরি করেছে।
দেখা গেছে, সপ্তাহের শেষ দিনগুলোয় প্রায় ৫ ঘণ্টারও বেশি দেরিতে ট্রেন দুটি চলাচল করছে। এ বিষয়টি এখন যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। শিউলী বেগমের বাড়ি লালমনিরহাটের সদর উপজেলার শেষ প্রান্ত ও রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার শেষ প্রান্ত তিস্তার কাছাকাছি এলাকায়। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি যখন রাত ১টা বা ২টার দিকে কাউনিয়া স্টেশনে পৌঁছায়, তখন বাড়ি ফেরা অসম্ভব হয়ে পড়ে তার। অথচ ট্রেনটি পৌঁছানোর কথা রাত ৯টার মধ্যেই।
একই কথা বলেন আরেক যাত্রী আইরিন আক্তার। ১৬ ফেব্রুয়ারি বগুড়া স্টেশন থেকে লালমনিরহাট যাওয়ার জন্য রাত ১০টায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন। যদিও ট্রেনটি বিকাল ৫টার দিকে বগুড়া আসার কথা ছিল। তিনি লালমনিরহাট পৌঁছেন রাত প্রায় আড়াইটার দিকে। এত রাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েন হাজারো যাত্রী।
এ ব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রধান যাত্রীবাহী ট্রেন নিয়ন্ত্রক শহীদুল ইসলাম বলেন, লোকোমোটিভ সমস্যা, বিভিন্ন ট্রেন ক্রসিং ও জনবল সংকটের কারণে ট্রেনগুলো সময়মতো চালানো যাচ্ছে না।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিএস) সাজ্জাত হোসেন জানান, লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি একটি লোকোমোটিভ দিয়ে আপ ও ডাউন চালানো হচ্ছে। কোচগুলোও পুরনো হওয়ায় ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। তাছাড়া জনবল সংকটের কারণে কিছু স্টেশনে ট্রেন ক্রসিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতেও কিছু সময় অপচয় হয়। এসব কারণেই শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। আর আন্তঃনগর ট্রেনের সময়সূচি নড়চড়ের কারণে লোকাল ট্রেনগুলোও শিডিউলমতো চলছে না।
রংপুর এক্সপ্রেসের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ট্রেনের পাওয়ার কার এবং কোচে যান্ত্রিক সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। এ কারণে ট্রেনটি ৫ ঘণ্টারও বেশি দেরিতে চলাচল করছে। গত বৃহস্পতিবার নিজেই সাড়ে ৫ ঘণ্টা দেরিতে ওই ট্রেনে দায়িত্ব পালন করে এসেছি। যেখানে আগে ট্রেন দুটি চলাচলে ১ থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি দেরি হতো না বলে জানান তিনি।