রাজশাহীতে ট্রেনের বগির বাইরের অংশ পরিষ্কার করতে ৩৫ কোটি টাকার অটোমেটিক ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট বসাচ্ছে রেলওয়ে। এমন আরও একটি প্ল্যান্টের কাজ চলছে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে।
পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন হতে যাওয়া এই প্ল্যান্টের কমলাপুর রেলস্টেশনেরটি ‘মিটার গেজ’ ট্রেনের জন্য এবং রাজশাহী রেলস্টেশনের প্ল্যান্টটি ‘ব্রড গেজ’ ট্রেনের কোচ পরিষ্কার করা হবে।
কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা আমেরিকা থেকে না আসায় প্ল্যান্টের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। তাই ২০১৯ সালে উদ্বোধনের কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। কাজের দীর্ঘসূত্রিতার বেড়েছে বাজেট। ফলে ব্যয় ও সময় বাড়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে রেলওয়ের আধুনিক ও অনন্য এই ব্যতিক্রম প্রকল্প!
রাজশাহী প্ল্যান্টের কাজ প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর চেষ্টা করা হলেও দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল না থাকায় তা করা যাচ্ছে না। কয়েকবার নষ্টও হয়েছে। আবার সারিয়ে তোলাও হচ্ছে। ফলে মূল্যবান এই প্ল্যান্ট কিভাবে চলবে তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
অবস্থা যখন এমন-তখন প্ল্যান্ট স্থাপনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও যাত্রার বিলম্ব কমিয়ে আনাসহ অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে মোটা অংকের টাকা অপচয়েই মনোযোগী রেলের কর্মকর্তারা। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানায়, রেলস্টেশনের ওয়াশফিল্ডে প্রতিদিন ট্রেনের ট্রিপ শেষে নিয়মিত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাত ও ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে ট্রেনের ভেতরের ও বাইরের অংশ পরিষ্কারের কাজ করা হয়।
এতে প্রতিটি ট্রেনের বগি পরিষ্কার করতে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় ব্যয় হয়। তাই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ট্রেন পরিষ্কার করতে অটোমেটিক ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ করছে। নতুন প্রযুক্তিতে মাত্র ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের মধ্যেই একটি ওয়াশিংপ্ল্যান্টে একত্রে তিনটি ট্রেনের বগির বাইরের অংশ পরিষ্কার করা সম্ভব হবে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ২৫০টি ব্রড গেজ ও মিটারগেজ কোচ ক্রয় প্রকল্পের অধীনে ৩৫ কোটি টাকা খরচে এ দুটি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। দুই বছর আগে ২০১৯ সালের মার্চেই এগুলো উদ্বোধনের কথা ছিল। ২০২১ সাল চলে যাচ্ছে কিন্তু প্ল্যান্ট দুইটির স্থাপনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাই এর সময় আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। একইসঙ্গে বাড়তে যাচ্ছে স্থাপন ব্যয়ও।
তবে, এ ধরনের বিলাসী প্রকল্প কেবল রাষ্ট্রের টাকা অপচয়েরই চেষ্টা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের রাজশাহী শাখার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন বলেন, ডাবল লাইন স্থাপন, অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও যাত্রার বিলম্ব কমিয়ে আনাসহ রেলের অনেক জরুরি কাজ পড়ে আছে। সেগুলোর দিকে নজর নেই। কেবল প্রকল্পে কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করা হচ্ছে। যেখানে দুর্নীতির সুযোগ আছে সেদিকেই ব্যস্ত সবাই। যাত্রীসেবার মান উন্নয়নের এখনও অনেক পথ বাকি। এ অবস্থায় কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে এখনই ওয়াশিং প্ল্যান্ট জরুরি ছিল না। তাহলে কার স্বার্থে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তা তদন্ত হওয়া দরকার।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী কুদরাত-ই-খুদা বলেন, অটোমেটিক ওয়াশিং প্ল্যান্ট খুবই অত্যাধুনিক ও সময়োপযোগী। এই প্ল্যান্টে শুধুমাত্র আন্তঃনগর ট্রেনই পরিষ্কার করা হবে। পুরো ট্রেন একবারেই প্ল্যান্টে প্রবেশ করবে। বগিগুলো জানালা-দরজা লাগিয়ে ওয়াশিং পাউডার ও পানি দিয়ে অটোমেটিক পদ্ধতি পরিষ্কার হয়ে বেরিয়ে আসবে। তবে, যেসব বগির জানালা-দরজা ঠিক নেই অর্থাৎ ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো এখানে পরিষ্কার করা যাবে না। একই পানি বার বার রিসাইক্লিং করে ওয়াশ করা হবে। আর ভেতরে আগের নিয়মেই পরিষ্কার করা হবে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহ বলেন, এ প্রকল্পটি অনেক অত্যাধুনিক। এর মাধ্যমে সময়, ব্যয় ও শ্রম বাঁচাবে। মূলত ভালো উদ্দেশেই এ প্রকল্প নেওয়া নিয়েছে রেলওয়ে। অনেক দিন চলাচলের কারণে আমদানি করা অত্যাধুনিক ট্রেনগুলো বাইরে থেকে ক্রমেই নিজ সৌন্দর্য হারাচ্ছে।
এই প্ল্যান্টে সয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় ট্রেনের বগিগুলো পরিষ্কার করা হলে বাইরে থেকে দেখতে আরো ঝকঝকে ও ঝলমলে দেখাবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা বাংলাদেশে আসতে পারছেন না।
এ কারণে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। তবে, স্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন টুকটাক কাজগুলো করছেন বলে দাবি করেন মহাব্যবস্থাপক।