এক কোটি মায়ের মোবাইলে সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষার উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দিয়েছে ‘নগদ’। বাড়ির পাশে ‘নগদ’ উদ্যোক্তা থাকায় সহজে, প্রয়োজন অনুসারে ক্যাশ-আউটও করে নিতে পারছেন উপকারভোগীরা। এই দফায় ‘নগদ’ বিতরণ করেছে আগে থেকেই জমে থাকা ২০২০ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের উপবৃত্তি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদের আগেই আরো দুটি প্রান্তিকের উপবৃত্তিসহ ২০২১ সালের শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতাও পেয়ে যাবেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা। ফলে শিক্ষার্থীদের ঈদের আনন্দ কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে।
সিলেটের আম্বরখানা কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গনেশ পাল দীপু জানান, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরেই সরকারের উপবৃত্তি নিয়ে কাজ করছেন। তার বিবেচনায় ‘নগদ’ যে প্রক্রিয়ায় একটি জাতীয় ডেটাবেজ তৈরি করে মায়েদের মোবাইলে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে সেটি যুগান্তকারী এক ঘটনা।
তিনি বলেন, আগে প্রক্রিয়াটা অ্যানালগ ছিল। শিক্ষকদেরকে অনেকগুলো রেজিস্টার এবং খাতা মেইনটেইন করতে হতো। বিভিন্ন স্কুল মিলে আমাদেরকে বারবার মিটিং করে তালিকা তৈরি করতে হতো। অনেক ক্যাশ টাকাও থাকতো, ফলে শিক্ষকদের ঝুঁকি বেশী ছিল। মা-বাবারাও বারবার টাকার জন্যে খোঁজ নিতেন। আর এখন এসবের কোনো বালাই নেই।
প্রায় এক বছর উপবৃত্তি বিতরণ বন্ধ থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গত বছরের ডিসেম্বরে ‘নগদ’-এর সঙ্গে চুক্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। ‘নগদ’-এর মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণের ফলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে, ভূতুড়ে সুবিধাভোগী বাদ পড়েছে, অন্যদিকে উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণে সরকারের খরচ এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।
দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই সকল শিক্ষার্থীর নাম, জন্ম নিবন্ধন সনদসহ শিক্ষার্থীর মা অথবা অন্য কোনো অভিভাবকের মোবাইল নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে একটি ডেটাবেজ তৈরি করেছে ‘নগদ’। ফলে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ভুয়া সুবিধাভোগীর নাম এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে। এতে জাতীয় রাজস্বেরও অপচয় রোধ হয়েছে।
সরকারের খরচ কমেছে ৭০ শতাংশ: আগে প্রতি হাজার টাকার উপবৃত্তি বিতরণ করতে সরকারের কাছ থেকে সাড়ে ২১ টাকা করে সার্ভিস চার্জ এবং ক্যাশ-আউট চার্জ নিত একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে ‘নগদ’ সব মিলে সরকারের কাছ থেকে নিচ্ছে হাজারে মাত্র সাত টাকা। সুবিধাভোগী মূল টাকার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাশ-আউটের খরচও পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে গ্রাহককে বাড়তি কোনো অর্থ খরচ করত হচ্ছে না। শুধু ভাতা বিতরণে এই প্রক্রিয়ায় সরকারের অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার সাশ্রয় হয়েছে। অপকৌশল প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিটি সুবিধাভোগীর মোবাইলে সচেতনতার বার্তা দিয়ে কল করছে ‘নগদ’।
এসএমএস পাঠালে অনেক ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী সেটি নাও পড়তে পারেন সে কারণে আইভিআর কলের মাধ্যমে তাদের জানানো হচ্ছে যে, কোনো অবস্থাতেই ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের পিন, ওটিপি বা পাসওয়ার্ড কাউকে দেওয়া যাবে না। ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের পিন, ওটিপি বা পাসওয়ার্ড দিয়ে দিলে উপবৃত্তির অর্থ বেহাত হয়ে যাওয়ার আংশকা থাকে।
উপবৃত্তি বিতরণ বিষয়ে ‘নগদ’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাহেল আহমেদ বলেন, উপবৃত্তি বিতরণ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটি হলো সুবিধাভোগীদের কাছে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। একটি বিষয়কে গতানুগতিক ধারার বাইরে কীভাবে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আমরা সফল হয়েছি।