বরাবরের মতো এবারও আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বঞ্চিত হয়েছে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্পখাত। রোববার (৬ জুন) বাজেটপরবর্তী প্রত্যাশা-প্রাপ্তির বিশ্লেষণ করে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানিয়েছে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ)।
সংগঠনটির সভাপতি আবদুল কাদের খান স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শতভাগ রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকৃতির গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্পখাতটি বরাবরের মতো কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটি একটি শতভাগ রপ্তানিমুখী খাত। উৎপাদিত পণ্যের শতভাগই ব্যাক-টু-ব্যাক এল/সি’র মাধ্যমে দেশীয় অন্যান্য রফতানিকারী খাতের অনুকূলে সরবরাহ হয়ে থাকে। জাতীয় রফতানি নীতি, বস্ত্র নীতি ও শিল্প নীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রফতানিকারকদের জন্য সমসুযোগের বিধান নির্ধারিত হলেও এ খাতটি কোন সময়ই সমসুবিধা প্রাপ্ত হয়নি।
বাজেটে কর্পোরেট ট্যাক্স অন্যান্য রফতানিকারক খাতের ন্যায় ১০-১২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করলেও ঘোষিত বাজেটে তা ৩২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিক সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে আমরা কর্পোরেট ট্যাক্স সবুজ কারখানার জন্য ১২ শতাংশ ও অন্যান্য কারখানার জন্য ১৫ শতাংশ নির্ধারনের সংশোধিত প্রজ্ঞাপনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।এছাড়া এ খাতের সব শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকৃতির। কোভিড-১৯ জনিত কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকৃতির শিল্প প্রতিষ্ঠানই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিধায় আমরা উৎসেকর ০.৫০ শতাংশ হতে ০.২৫% এ ধার্য করে প্রজ্ঞাপনের আবেদন করা হয়েছে।
এক্সেসরিজ শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদনে অনেক সময় অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বৈদেশিক মূদ্রায় ব্যাক-টু-ব্যাক এল/সি’র মাধ্যমে কাঁচামাল ক্রয় করে রফতানি করা হয়ে থাকে। এ ধরনের ক্রয়েও সাধারণ ক্রয়ের মতো আয়কর পূর্বের ন্যায় বলবৎ রাখা হয়েছে। এরূপ আয়করের কারণে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতিষ্ঠান রফতানির সক্ষমতা হারায় বিধায় অত্র অ্যাসোসিয়েশন বাজেটে এরূপ আয়করের অব্যাহতি চাওয়া হলেও তা প্রদান করা হয়নি।
এ কারণে সংসদে বাজেট অনুমোদিত হওয়ার পূর্বেই বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে দাবি তুলে ধরা হয়েছে।রফতানিকে অধিক প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত কয়েকটি সেবা ও পণ্যে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হলেও কনসালটেন্সি, শ্রমিকের কল্যাণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম যেমন—পিকনিক, চিকিৎসা সেবা, রফতানির কাজে নিয়োজিত গাড়ি ও জেনারেটরের জ্বালানি ইত্যাদি ক্রয়ে মূসক প্রযোজ্য রয়েছে। রফতানিকে উৎসাহিত করতে রফতানি শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্থানীয় বাজার থেকে সংগৃহীত পণ্যে ও সেবায় ভ্যাটমুক্ত এবং মূসক-১৯ দাখিল হতে অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ করা হলেও তা করা হয়নি। এজন্য আমরা এ বিষয়টিও বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে।রফতানিকে উৎসাহিত করতে ৩৫টিরও বেশি পণ্য আর্থিক প্রণোদনার আওতায় নেওয়া হয়েছে বহু বছর আগে। গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এবং প্যাকেজিং শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ শতভাগ রফতানিমুখী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প হওয়া সত্ত্বেও অদ্যাবধি এ সেক্টর এ সুযোগ প্রাপ্ত হয়নি।
তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে দুটি উপাদান কাজ করে থাকে, যার একটি হচ্ছে বস্ত্র এবং অপরটি এক্সেসরিজ। পোশাক শিল্পের গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যের পুরো চাহিদাই স্থানীয়ভাবে পূরণ হচ্ছে। পোশাক খাত নগদ সহায়তা/ডিউটি ড্র-ব্যাক এর সুবিধা প্রাপ্ত হলেও এ সেক্টর কখনও আর্থিক প্রনোদনা প্রাপ্ত হয়নি।রফতানি নীতি আদেশের ৪.১০.১ অনুচ্ছেদে সাবসিডি (নগদ সহায়তা) সম্প্রসারণের এবং জাতীয় শিল্প নীতির ৪.৮ অনুচ্ছেদে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাতের (যেমন: গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং) অনুকূলে নগদ প্রণোদনা (ক্যাশ ইনসেনটিভ) ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার উল্লেখ রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এবং রফতানির স্বার্থে এ শিল্প খাতের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার প্রদত্ত আর্থিক প্রণোদনা এ সেক্টরেও প্রদানের জন্য প্রস্তাব করা হলেও তা বিবেচনা করা হয়নি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা ১৮০০ শতাধিক গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে প্রচ্ছন্ন রফতানির বিপরীতে শেয়ার অনুপাতে/ন্যূনতম ১ শতাংশ রফতানি প্রণোদনার দাবি সংগঠনটির।