ঢাকা, ১৬ জুলাই মঙ্গলবারঃ বলা হয়ে থাকে দুধ একটি পরিপূর্ণ খাদ্য। মানবদেহের প্রায় সবটুকু চাহিদা পূরণে সক্ষম দুধ। শিশুদের জন্য অপরিহার্য খাদ্যপণ্য দুধ নিয়ে দেশে চলছে বিভীষিকার রাজত্ব। একের পর এক গবেষণার ফলে উঠে আসছে ভয়াবহ সব তথ্য। যেন অভিভাবকরা অর্থ ব্যয় করে নিজ সন্তানকে আক্ষরিক অর্থেই বিষ কিনে খাওয়াচ্ছেন!
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিচারপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিলকৃত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানিয়েছে,’ ১১ কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের নমুনায় গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি সীসার উপস্থিতি রয়েছে’। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান মামুন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
বিএসটিআই অনুমোদিত মিল্কভিটা, ডেইরি ফ্রেশ, ইগলু, ফার্ম ফ্রেশ, আফতাব মিল্ক, আল্ট্রা মিল্ক, আড়ং ডেইরি, প্রাণ মিল্ক, আইরান, পিউরা, সেইফ মিল্ক সবগুলোর নমুনাতেই মিলেছে সীসা।
আদালতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন,’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ১৯টি প্যারামিটারে দুধ পরীক্ষা করেছেন। বিএসটিআই ৯টি প্যারামিটারে দুধ পরীক্ষা করেছে। আর আমরা পাঁচটি প্যারামিটারে দুধ পরীক্ষা করেছি।’
জানা গেছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রতিবেদনে উল্লেখিত পরীক্ষা করিয়েছে, বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিসিএসআইআর, প্লাজমা প্লাস, ওয়াফেন রিসার্চ, পারমাণু শক্তি কমিশন ও আইসিডিডিআরবি’র পরীক্ষাগারে। এসব ল্যাবে প্রাপ্ত ফল যাচাই করে দেখা যায়, তরল দুধের ৫০টি নমুনা, ১১টি পাস্তুরিত দুধের ১১টি নমুনা ও ৬টি সবক’টি দুধের নমুনায় গ্রহণযোগ্য মাত্রার বেশি সীসা ও ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে।
বিএসটিআই এর পক্ষে তাঁদের আইনজীবী এম আর হাসান মামুন আদালতে বলেন,’গত মে মাসে আমরা ৩০৫টি কোম্পানির প্রক্রিয়াজাত দুধ ও পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করেছিলাম। আজ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যে ১১টি কোম্পানির দুধে মাত্রাতিরিক্ত সীসা বা ক্যাডমিয়াম পেয়েছে আমাদের সে রিপোর্টে এই ১১টি কোম্পানির দুধে তা ছিল না। তবে দু’টি কোম্পানির দুধ একেবারেই বিএসটিআই’র স্ট্যান্ডার্ডে ছিল না। সে দু’টি কোম্পানিকে আমরা নোটিশ করেছি। বিএসটিআই ড. শাহনীলার রিপোর্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে।’
আদালত সংক্ষুব্ধ হয়ে বলেন,’কেউ বলছেন দুধে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে, আবার কেউ বলছেন ক্ষতিকর উপাদান নেই। তাহলে দুধ নিয়ে কি কোন রাজনীতি হচ্ছে? এ ধরনের দুধ বাজারে থাকা কি সমীচীন? বিশ্বের অন্য কোন দেশে দুধে এ ধরনের ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বড় অংকের জরিমানা গুনতে হত দফায় দফায়। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দুধ পরীক্ষার গবেষণার ফল প্রকাশের পর একজন সেক্রেটারি তাকে নিয়ে কথা বললেন। কিন্তু কেন?’
এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই কি ধরনের আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছে তা প্রতিবেদন আকারে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টকে জানাতে বলা হয়েছে। জনস্বার্থে দুধের দূষণ পরীক্ষা ও গবেষণায় বিএসটিআই নিবন্ধিত দুধ কোম্পানিগুলোকে একটি তহবিল গঠন করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।