মৌলভীবাজার, ৩০ মে বৃহস্পতিবারঃ জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের পরিচালিত দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানকে জনসাধারণ অকুণ্ঠ সমর্থন করলেও, ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে অসৎ ব্যবসায়ীরা। রংপুরে ধর্মঘট আহবানের ঘটনার রেশ না কাটতেই এবার মৌলভীবাজারে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আল আমিন, আজ অভিযান পরিচালনার সময় ব্যবসায়ীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে শহরের এম সাইফুর রহমান রোড এলাকার বিলাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে তিনি হামলার শিকার হন। হামলার আগে তিনি খাদ্য তৈরির কারখানা পরিচ্ছন্ন না থাকায় রাজমহলকে ৩০ হাজার টাকা ও ৭০০ টাকার দেশি প্যান্ট ২ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রির দায়ে সেন্ট্রাল রোড এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করেন। এরপর, এমিবি আলটিমেট শপে পণ্যের অতিরিক্ত দাম রাখা, বিদেশী পণ্যের নামে ভেজাল পন্য বিক্রির দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেখানে মৌলভীবাজার বিজনেস ফোরামের নেতৃবৃন্দ’র উপস্থিতি ও ইন্ধনেই ব্যবসায়ীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে।
সেখান থেকে বের হয়ে পাশের সুপার শপ ‘বিলাশ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে’ অভিযান পরিচালনা করে একই কারণে প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি। এসময় বিলাশের অন্যতম মালিক সোহাদ আহমদ জরিমানা দিতে আস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে ভোক্তার সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিনের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ান তিনি। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা তার উপর হামলা চালায়।
তাঁকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে ব্যবসায়ীরা পাশের একটি দোকানে নিয়ে আটকে রাখেন। পরে বিলাশসহ আশপাশের দোকানের মালিক-কর্মচারিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাকে ঘিরে রাখলে উত্তেজনা ছড়ায়। পরে মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুরিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম ঘটনাস্থেলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আল আমিন জানিয়েছেন, বিলাশ পন্যের মূল দামের উপর টেম্পারিং করে অতিরিক্ত দাম রাখছে। বিদেশী পন্যের নামে ভেজাল পন্য দিয়ে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে এমন প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করি। কিন্তু তিনি তা প্রদান না করে আমার উপর কর্মচারি লেলিয় সরকারী কাজে বাধা ও আমাকে লাঞ্ছিত করেন।
অভিযোগের ব্যাপারে বিলাশ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক সুমন আহমদ বলেন, সারা বছর ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা ঘরে বসে থাকেন। আর রমজান ও ঈদে যখন আমাদের ব্যবসা জমে ওঠে তখন তারা এসে অভিযানের নামে আমাদের হয়রানি করেন। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা উনার প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি জুয়েলারি দোকানে জিম্মি অবস্থা থেকে ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আল-আমিনকে উদ্ধার করি। এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মৌলভীবাজার থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন সাধারণ ক্রেতা ভোক্তাকণ্ঠকে ফোনালাপে জানিয়েছেন, তাঁরা এ বছর প্রচণ্ড আশাবাদী হয়েছেন দেশজুড়ে ভেজাল ও বিভিন্ন জুলুমের বিরুদ্ধে অভিযান দেখে। একইসাথে আজকের ঘটনায় তাঁরা ক্ষুব্ধ, এই স্পর্ধা তাঁরা কিভাবে পায়। আইন যেন কঠোর থাকে, নইলে তাঁদের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব না।