ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: বেনাপোল স্থলবন্দরে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধে সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে তিনি এ নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনার পর নিরাপত্তা বাড়িয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান সৌরভ হেসেন জানান, বন্দরে করোনা সংক্রমণ রোধে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা থাকলেও অনেকে তা মানছেন না। ভারতীয় ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হলেও মাস্ক ছাড়া অনেক শ্রমিক ও ভারতীয় ট্রাকচালক বন্দর এলাকায় চলাফেরা করছেন। নিরাপত্তা কর্মীদের তদারকিও অনেকটা গা ছাড়া ভাব। এতে চালক ও শ্রমিকদের মাধ্যমে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়ানোর ভয় বাড়ছে।
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনসহ কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার বেড়ে যাচ্ছে। এতে সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। মাস্ক ছাড়া বন্দর ও ইমিগ্রেশন এলাকায় কোনোভাবে চলাচল করা যাবে না। বন্দর শ্রমিকরা যাতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানেন সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। যদি সংক্রমণ বেড়ে যায় তবে ভারতফেরত যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন চালুর সব প্রস্তুতি রাখা দরকার। কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে বেনাপোল বন্দর, কাস্টমস, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সুরক্ষা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির পরিচালক মতিউর রহমান জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে ভয়বহতা রোধে স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে জরুরি টিকিৎসা, ব্যবসা ও শিক্ষা গ্রহণের কাজে প্রতিদিন পাসপোর্ট যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেন। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যও চালু রয়েছে। তাই এখানে সুরক্ষা আরও জোরদার করতে হবে। ভারতীয় ট্রাকচালকরা যেন অপ্রয়োজনে বন্দরের বাইরে না আসে এবং বাংলাদেশি ট্রাকচালকেরা ভারতে প্রবেশকালে যেন শতভাগ সুরক্ষা মানেন এটা নিশ্চিত করতে হবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ভারতে করোনা সংক্রমণের অবস্থা আবারও ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। বন্দরে সুরক্ষা ব্যবস্থা সন্তোষজনক না। সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সংক্রমণ বাড়লে আবারও বাণিজ্য বন্ধের শঙ্কা রয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, মাঝে করোনা রোধে বন্দরে সুরক্ষা ব্যবস্থা শিথিল থাকলেও এখন ওমিক্রন রোধে তা জোরদার করা হয়েছে। ভারতীয় ট্রাক বন্দরে প্রবেশকালে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। মাস্ক বিতরণ ও সতর্কতায় প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিন ভারত থেকে সাড়ে ৩শ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করা হচ্ছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজু জানান, ওমিক্রনের কারণে ভারত অংশে কড়াকড়িতে এ পথে পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত কমেছে। ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ। মেডিকেল, বিজনেস ও শিক্ষা ভিসায় যাত্রীরা যাতায়াত করছে। বর্তমানে দিনে ৫শ থেকে ৬শ জনের মতো বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারত ভ্রমণ করছে। ভারতীয়রা দেশে আসছে দিনে দেড়শ থেকে ২শ জন। ভারত ভ্রমণে প্রয়োজন হচ্ছে আরটিপিসিআর থেকে পরীক্ষা করানো ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনা নেগেটিভ সনদ ও ভারতে থেকে ফিরতে লাগছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নেগেটিভ সনদ।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার আজিম উদ্দীন বলেন, ওমিক্রন রোধে ভারতফেরত করোনার সন্দেহভাজন ৬৫ জন যাত্রীর নমুনা নিয়ে র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। তবে তারা শরীরে ওমিক্রন বহন করছে কিনা তা পরীক্ষার পর বোঝা যাবে। আক্রান্তরা যশোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রেড জোনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।