ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
সাধারণত এপ্রিল মাসে দেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কিন্তু এ বছর মার্চের শুরুতেই রোগী বাড়তে শুরু করে আশঙ্কাজনক হারে। এ অবস্থায় রাজধানীতে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থকর্মীদের।
ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতালের নির্ধারিত বেডের বাইরে স্থাপন করতে হয়েছে দুইটি তাঁবু।
গত ১৬ মার্চ থেকে এ হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর ভিড় বাড়তে থাকে। সেদিন রোগী ভর্তি ছিল এক হাজার ৫৭ জন। এরপর থেকে প্রতিদিনই রোগী বেড়েছে।
১৭ মার্চ এক হাজার ১৪১ জন, ১৮ মার্চ এক হাজার ১৭৪ জন, ১৯ মার্চ এক হাজার ১৩৫ জন, ২০ মার্চ এক হাজার ১৫৭ জন, ২১ মার্চ এক হাজার ২১৬ জন, ২২ মার্চ এক হাজার ২৭২ জন, ২৩ মার্চ এক হাজার ২৩৩ জন, ২৪ মার্চ এক হাজার ১৭৪ জন ভর্তি হয়। ২২ মার্চে একদিনের হিসাবে এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল রেকর্ড।
এরপর ২৫ মার্চে এক হাজার ১৩৪ জন, ২৬ মার্চে এক হাজার ২৪৫ জন, ২৭ মার্চে এক হাজার ২৩০ জন।
তবে ২২ মার্চের রোগী সংখ্যার রেকর্ড ভেঙ্গে যায় ২৮ মার্চে। সেদিন একদিনে ভর্তি হয় এক হাজার ৩৩৪ জন। এরপর ২৯ মার্চ ৩১৭ জন, ৩০ মার্চ এক হাজার ৩৩১ জন আর ৩১ মার্চে রোগী ভর্তি হয় এক হাজার ২৮৫ জন।
১ এপ্রিলে এক হাজার ২৭৪ জন, ২ এপ্রিলে এক হাজার ২৭৪ জন আর আজ রবিবার (৩ এপ্রিল) দুপুর তিনটা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৬৬৪ জন।
আইসিডিডিআর,বি-র ইতিহাসে ডায়রিয়া রোগী ভর্তির সংখ্যা এবারই সর্বোচ্চ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। প্রতি ঘণ্টায় এখানে ৬০ থেকে ৭০ জন ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধও রয়েছেন।
রোগীদের জায়গা দিতে হাসপাতালের নির্ধারিত স্থান ছাড়াও বাইরে দুটো তাঁবু টানানো হয়। এর প্রতিটিতে ৮০টি করে বেড আছে।
এর আগে, এই হাসপাতালে ২০১৮ সালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেড়েছিল। আইসিডিডিআর,বি-র গণমাধ্যম ব্যবস্থাপক তারিফুল ইসলাম খান বলেন, ২০১৮ সালে এমন রোগীর সংখ্যা বেড়েছিল। সেবার গড়ে এক হাজারের মতো রোগী ছিল, একদিনে সর্বোচ্চ রোগী ছিল এক হাজার ৪৭ জন। কিন্তু এবার এক হাজার ২০০ রোগী ছাড়িয়ে গেছে, এর আগে কখনও এমন হয়নি।
রোগীর চাপে হাসপাতালে হিমশিম অবস্থা। নির্ধারিত চিকিৎসক, নার্সসহ সাপোর্ট স্টাফে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হচ্ছে হাসপাতাল, সিনিয়র চিকিৎসকসহ অন্যরা রাতের পালায়ও কাজ করছেন।
ডায়রিয়া নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরও। অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, অতিসম্প্রতি ডায়রিয়া পরিস্থিতি খানিকটা উদ্বেগ তৈরি করেছে। এবং ঢাকার আশেপাশে রোগী খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের সূত্র অনুযায়ী, সেখানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রোগী ভর্তি বেড়েছে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে হাত ধুয়ে খাবার খাওয়া, বাইরের খাবার না খাওয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
আইসিডিডিআর’বি-র সহকারী বিজ্ঞানী ডা. শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, রোগী একটু একটু করে বাড়ছিল। মার্চ-এপ্রিল মাস এলেই আমরা প্রস্তুত থাকি। সাধারণত এটা মার্চের শেষ দিকে হয়। কিন্তু এবারে মার্চের শুরুতেই হয়ে গিয়েছে। এই সময়ে যাদের ডায়রিয়া হয়, তাদের পানিশূন্যতার হারটা বেশি থাকে। কিন্তু এবারে আগের চেয়েও রোগী একটু বেশি পাচ্ছি।
সাধারণত শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও এবারে ‘অ্যাডাল্ট’ রোগীর সংখ্যা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, ১৮ বছরের বেশি বয়স-এমন রোগীর সংখ্যাই এবার বেশি। তবে, শিশুও রয়েছে।