ভাবার সময় এখনই। বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট এবং করোনা-উত্তর দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করতে হলে কৃষি উৎপাদন যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি খাদ্য-পণ্যের সুষম বণ্টন ও অপচয় বন্ধ করতে হবে। আমাদের দেশে যে খাদ্য-পণ্য উৎপাদিত হয় – সে-সবের প্রায় ৩০% বিভিন্নভাবে অপচয় বা নষ্ট হয়। আর এ কাজটি হয় আমাদের ইচ্ছা, অনিচ্ছা এবং অজ্ঞতায়।বিশ্ব আজ মহা সংকটে! কোভিড-১৯ বিশ্বে শুধু মহামারি-ই ঘটায় নি, বিশ্ব-সভ্যতাকে নিয়ে গেছে এক সীমাহীন অনিশ্চয়তায়। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, বিশ্বে চরম খাদ্যসংকটজনিত কারণে ব্যাপক মানুষ মারা পড়বে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে পুষ্টি ও অনাহারে বিশ্বে প্রায় তিন কোটি লোকের প্রাণহানি হতে পারে।। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব খাদ্য সংকট সম্পর্কে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নেতাদের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে: খাদ্য উৎপাদন চালু রাখতে হবে, অধিক প্রকার ফসল ফলাতে এক ইঞ্চি জমিও খালি না রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে করোনা-পরবর্তী প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে “খাদ্য নিরাপত্তা”।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা খাদ্য নিরাপত্তার চারটি ধাপ নির্ধারণ করেছে: প্রাপ্যতা, প্রবেশ অধিকার, খাদ্যের সঠিক ব্যবহার এবং টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা।করোনা প্রভাবে খাদ্যপ্রাপ্যতা ইতোমধ্যে সংকটে পড়েছে এবং কৃষি-খাদ্য-পণ্য সরবরাহ চেইনে দেখা দিয়েছে অচল অবস্থা।
কৃষি-পণ্য নিয়ে বিপাকে কৃষক! বাজার ব্যবস্থায় বিরাজ করছে অপ্রতুলতা। আমদানি-রপ্তানিতে চলছে অচল অবস্থা। মারাত্মকভাবে ক্ষতি হয়েছে হাঁস-মুরগি, পশুপালন, মৎস্য সম্পদের। বিশ্ববাজারে চলছে ক্রেতা ও পণ্যের সংকট।বীজ, সার, বালাইনাশক, দুর্যোগ মোকাবিলা, শ্রমিকের চলাচল, পণ্য সংগ্রহে বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হিসেবে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে আমাদের সকলকে কৃষক ও কৃষিতে মনোনিবেশ করার কোনো বিকল্প নেই।আমাদের দেশের মানুষকে এখন শুধু ভাতের ওপর নির্ভর ক’রে থাকলে চলবে না; সামাজিকভাবে দেশের সকল মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। দেশীয় পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার এখনোই সময়। খাদ্যের অপচয় শত ভাগ বন্ধে সকলকে সচেতন হতে হবে; নতুবা আমাদের ভোগ করতে হবে চরম দুর্ভোগ!১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য – জমি, মাটি ও পানির মতো প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারই নিশ্চিত করতে পারবে আমাদের বাংলাদেশের “খাদ্য নিরাপত্তা”।
লেখক : কোঅর্ডিনেটর, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড সীড প্রোগ্রাম, সিসিডিবি।