ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:
দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতায় ১১ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন প্রান্তিক কৃষকরা। এই ঋণ বিতরণ করা হবে কৃষকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে। এই ঋণ হবে জামানতবিহীন। ১ শতাংশ আবার কৃষক ফেরত পাবেন। ১ শতাংশ যাবে তহবিলে। ঋণের পৌনে তিনশ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে দুইশ উপজেলার কৃষকের মধ্যে। পরিকল্পনা মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) এরই মধ্যে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে।
‘রূপকল্প ২০৪১: দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র সঞ্চয় যোজন’ প্রকল্পের আওতায় বাড়তি ঋণের প্রস্তাব করে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ)। প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে পিইসি সভায় ১১ শতাংশ সুদে প্রান্তিক কৃষককে ঋণ বিতরণের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ১৫০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়ন করবে এসএফডিএফ। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৫০ কোটি টাকা উল্লেখ করা হলেও লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্কসহ একাধিক অনুচ্ছেদে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ২৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। একই বিষয়ে দুই রকম তথ্য থাকায় তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছিল কমিশন। প্রকল্পে ক্ষুদ্রঋণ ৮৬ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ ২০ কোটি ৬০ লাখ এবং বিশেষ উৎসাহ তহবিল বাবদ ১০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ অর্থ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৭৮ শতাংশ প্রায়। তবে প্রকল্পে সুফলভোগী নির্বাচন নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে দাবি পরিকল্পনা কমিশনের। যদিও পিইসি সভায় এসএফডিএফের প্রস্তাবনা মেনে নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এখন প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের দপ্তরে রয়েছে। মন্ত্রী অনুমোদন দিলেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মতিউর রহমান বলেন, প্রথমে ১১ শতাংশ সুদহার দেখে আমি চমকে গিয়েছিলাম। তবে এর মধ্যে ১ শতাংশ ফেরত দেওয়া হবে প্রান্তিক কৃষককে। আরও ১ শতাংশ মূল তহবিলে চলে যাবে। কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যারা ঋণ বিতরণ করবেন, ওই অর্থ দিয়ে তাদের বেতন হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সব ব্যাখ্যা নেওয়ার পরই এটা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এসএফডিএফ সূত্র জানায়, ব্যাংকের সুদের সঙ্গে এটার তুলনা করলে হবে না। ১১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ নেওয়া হবে। এরপর আবার ১ শতাংশ ফেরত দেওয়া হবে। এই ঋণ বিতরণ করা হবে কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে।
ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক সচিব মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন অলাভজনক সংস্থা। সিঙ্গেল ডিজিট ঋণ আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। তবে আমরা ১১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ নেই। এটা সুদ নয়, সার্ভিস চার্জ। ব্যাংকের ঋণের সঙ্গে এটার তুলনা করলে হবে না। আমরা কৃষকের ঘরে ঘরে গিয়ে ঋণ দিয়ে আসি। এ কাজে এনজিওগুলো ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ সুদ নেয়। আমরা নেই ১১ শতাংশ সার্ভিস। ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ আবার কৃষকদের ফেরত দেওয়া হবে। আমরা প্রফিট করি না, আয় থেকে ব্যয় হবে। প্রতি বছর আমাদের মন্ত্রিপরিষদে জবাবদিহি করতে হয়।
বর্তমানে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম দেশের ৩৬টি জেলার ১৭৩টি উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি আরও ২৭টি নতুন উপজেলায় সম্প্রসারণসহ ২০০টি উপজেলায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রান্তিক চাষিদের জামানতবিহীন ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য ১৫৩ কোটি টাকা আবর্তক ঋণ তহবিল ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ অর্থ উৎপাদনশীল বা আয়বর্ধক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অত্যন্ত অপ্রতুল। এরই ধারাবাহিকতায় পল্লি অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের একটি সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আর্থিক সহায়তা, উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আরও ২৭টি উপজেলা অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২০০টি উপজেলায় বাস্তবায়নের জন্য ‘রূপকল্প ২০৪১: দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র সঞ্চয় যোজন’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।