ইউরোপের বাজারে কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য (ইউকে) ও নেদারল্যান্ড সফরে যাচ্ছে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বরার্ট চ্যাটারসন ডিকশনের সঙ্গে বৈঠকের পর কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এক সময় খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল। এখন আমাদের প্রধান খাদ্য ভাতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের শাক-সবজি ফলমূল, তেল-ডাল, পেঁয়াজ সব কিছুরই উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এখন চিন্তা করছি কৃষকের আয় কিভাবে বাড়ানো যায়। সেটি করতে হলে আমাদের বাণিজ্যিক কৃষিতে যেতে হবে। বাণিজ্যিক কৃষিতে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় তুলনামূলকভাবে কম।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শাক-সবজি ও ফলমূলের উৎপাদন বেড়েছে তাই এগুলো রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। আমরা কিছু কিছু রপ্তানি করি যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে, সেখানে বাঙালি যারা কাজ করে তাদের জন্য। আমরা চাচ্ছি ইউরোপীয় দেশে উন্নত দেশের মূল মার্কেটে যাওয়ার জন্য।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এজন্য আমার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নেদারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যে (ইউকে) যাচ্ছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, ফ্রেস গ্রুপের মোস্তফা কামাল, এসিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এফ এইচ আনসারী এবং বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রতিনিধিদলে থাকছেন। লিডিং বিজনেস হাউজগুলোর প্রায় সবাই যাচ্ছেন।’
এছাড়া প্রতিনিধিদলে সরকারি কর্মকর্তারা থাকবেন বলে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি আগামী ৯ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত দুটি দেশ সফর করবে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এই সফরের বিষয়ে…ইউকেতে আমরা কোন ধরনের কর্মসূচি করবো, কাদের সঙ্গে দেখা করবো… আমরা চাচ্ছি বড় বড় কোম্পানির সিওদের সঙ্গে, পরিবেশ ও কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এবং তাদের সঙ্গে একটা লিংকেজ সৃষ্টি করতে। যাতে আমরা রপ্তানি বাড়াতে পারবো।’
‘এটা নিয়ে আলোচনা (রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে) করেছি, উনি আমাদের সহযোগিতা করবেন। যাতে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে রপ্তানি করতে পারি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি রপ্তানি বাড়াতে পারি, তবে আমাদের কৃষকদের আয়ও বাড়বে। স্থানীয় বাজারেও মানুষের কেনার ক্ষমতা বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘পোল্ট্রি বা দুধ একটু বেশি উপাদন হলেই আর বেচতে পারে না। ডিমেও এই রকম। মানুষের আয় বাড়া দরকার। এটা কোনভাবেই স্থানীয় মার্কেটে হবে না। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড যেভাবে…ভিয়েতনাম ৪০ বিলিয়ন ডলার আয় করে শুধু কৃষিপণ্য রপ্তানি করে।’
‘মানের বিষয়েও আমরা যাচ্ছি। ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডের ক্ষেত্রে কী কী রিকয়ারমেন্ট, গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিসেস, অ্যাক্রেডিটেড ল্যাবের সার্টিফিকেট। মানুষের নিরাপদ খাদ্য খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। আমরা কিভাবে নিরাপদ খাদ্য দিতে পারি, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের কারিগরি সহযোগিতা চায় জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাই। ফান্ডিং সাপোর্ট এখন চাচ্ছি না। ইনশাআল্লাহ আমাদের ফান্ড আছে। এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিও আমরা সেটআপ করতে পারবো। কিন্তু কারিগরি সহযোগিতা দরকার। এই ব্যাপারেই সহযোগিতা চেয়েছি। সে আমাদের বলেছে, কারিগরি ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা তারা দেবেন।’
‘পূর্বাচলে একটি প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২ একর জমি দিয়েছেন। সেখানে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অ্যাক্রেডিটেড ল্যাব করবো, যেখান থেকে আমাদের কৃষিপণ্য সার্টিফাইড করা হবে। সেখানে প্যাকেজিং করে বিভিন্ন পণ্যের জন্য আলাদা আলাদা কোল্ড স্টোরেজ থাকবে। সেখানে থেকে পণ্য এয়াপোর্টে চলে যাবে। এজন্য তাদের ল্যাবগুলো দেখার জন্য যাচ্ছি এবং লিংকেজ করা, আমরাও কিভাবে করতে পারি।’
জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী গতকাল তাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। সেগুলো নিয়েও কিছু বলেছেন যে, বাংলাদেশের একটি বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ৪৯টি দেশের লিডার হিসেবে বাংলাদেশ কাজ করছে। আমরা প্রশংসা করি, এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য যেভাবে কপ২৬ আয়োজন করেছে। গ্লোবাল লেভেল পার্টিসিপেশন ভালো। ভালো আলোচনা হচ্ছে। আমরা আশা করি, একটা ভালো ফলাফল কপ থেকে পাবো।’