ভোক্তাকণ্ঠ প্রতিনিধি: রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট, হৃদরোগ ঝুকি ও করণীয় : ভোক্তা পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভা সম্মিলিতভাবে আয়োজন করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং প্রগতির জন্য জ্ঞান(প্রজ্ঞা)। আলোচনা সভায় ৯ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সভার প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিল্পমন্ত্রী।
আলােচনা সভায় জানানাে হয় মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ হৃদরােগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে ভালাে’ ভালো কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় এবং মানুষকে অসুস্থ্য করে ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের কারণে হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সাধারণত ভাজা পােড়া ও বেকারি খাবারে শিল্পােৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট থাকে।
ট্রান্স ফ্যাট (Industrially-produced trans fats) থাকে। ভেজিটেবল অয়েল (পাম, সয়াবিন ইত্যাদি) এর সাথে হাইড্রোজেন যুক্ত (হাইড্রোজেনেশন) করলে তেল জমে যায় এবং ট্রান্স ফ্যাট উৎপন্ন হয়। এই পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা PHO আমাদের দেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত।
ভাজা পোড়া খাদ্যে একই তেল উচ্চ তাপমাত্রায় বারবার ব্যবহারের কারণেও খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট সৃষ্টি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির দৈনিক ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিত মোট খাদ্যশক্তির শতাংশের কম, অর্থাৎ দৈনিক ২০০০
ক্যালরির ডায়েটে তা হতে হবে ২.২ গ্রামের চেয়েও কম। ট্রান্স ফ্যাট এর ব্যাপক স্বাস্থ্যকুঁকি বিবেচনা করে ডেনমার্ক বিশ্বে প্রথম ২০০৩ সালে
খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মােট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ করে। ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরানসহ অনেক দেশে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ কার্যকর করেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর আমেরিকা এবং কানাডা ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস পি,এইচও এর উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। ভারতের ফুড সেফটি অ্যাড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি ২০২২ সালের মধ্যে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশ কমিয়ে আনার পাশাপাশি খাবারে শিল্পােৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট পরিহার করার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এখনও ৫০০ কোটি মানুষ শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যাদের অধিকাংশই বাস করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলােতে।
ট্রান্স ফ্যাটমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে আলোচনা সভার প্রধান অতিথি শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন,এমপি এর হাতে ভােক্তা অধিকার সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবিসংবলিত ভােক্তা দাবিনামা’ তুলে দেয়া হয় এবং ভোক্তা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই দাবিনামা অবিলম্বে কার্যকর করার আহ্বান জানানাে হয়। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর এর সহায়তায় আয়ােজিত অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এর মহাপরিচালক মােঃ মুয়াজ্জেম হােসাইন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুব কবীর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও লাইন ভিরেক্টর প্রফেসর ডাঃ সানিয়া তহমিনা ঝোরা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক এবং
গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর পাবলিক হেলথ স্পেশালিস্ট মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস। অনুষ্ঠানে আলােচ্য বিষয় সম্পর্কে
আলােকপাত করেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সােহেল রেজা চৌধুরী এবং
প্রজ্ঞার ট্রান্স ফ্যাট বিষয়ক প্রকল্পের টিমলিডার মাে: হাসান শাহরিয়ার। এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক নাদিরা কিরনের সঞ্চালনায় আয়ােজিত
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্যাবের সভাপতি গােলাম রহমান।