জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্যে বিষ বা ভেজালরোধে কোনো রকম বৈষম্য বা রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই আইন প্রয়োগে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ ১১ দফা সুপারিশ জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।
জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে পবা আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে এক সেমিনার থেকে এ সুপারিশ জানানো হয়। সংগঠনটি বলছে, তৈরি পোশাক শিল্পের পর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় রফতানি খাত হিসেবে কৃষি পণ্য উঠে আসবে, যদি সরকার বিষয়টি ঠিকভাবে তদারকি করে।
সংগঠনটির অন্যান্য সুপারিশগুলো হচ্ছে—
• খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানোর সাথে জড়িত এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদিযুক্ত ও ভেজাল খাদ্য বিক্রয়কারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দণ্ড প্রদান অব্যাহত রাখা।
• ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এবং ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।
• বিষ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারকে খাদ্যে বিষ ও ভেজাল মিশ্রণের উৎসমূল থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
• সরকারের নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী এবং লেবেল ছাড়া বা মিথ্যা লেবেলের অধীন কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
• সময়োপযোগী কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা।
• গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে কৃষক, উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের রাসায়নিক দ্রব্যাদি, কীটনাশক, ভেজাল মিশ্রণের ক্ষতিকর দিক এবং আইনে বর্ণিত দণ্ড তুলে ধরে সচেতন করা।
• পণ্য আমদানি পর্যায়ে এনবিআরের মাধ্যমে বন্দরসমূহে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা করা।
• খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা।
• বিষযুক্ত খাদ্যের ভয়াবহ বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশে জৈব কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন ও একে জনপ্রিয় করে তোলা।
• ২০১৯ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে নির্মিত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবটি দ্রুত কৃষকদের জন্য চালু করা।
সেমিনারে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজিনিয়াস নলেজের (বারসিক) সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশ আয়তনে ছোট ও দুর্যোগপূর্ণ দেশ হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে বর্তমানে ধান, মাছ ও সবজি উৎপাদনে এগিয়ে চলেছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে বিগত চার বছরে বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রফতানি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরে সেটা হয় ঋণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন এই খাতের ব্যবসায়ী ও কৃষি অর্থনীতিবিদরা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রফতানি হতো মাত্র ৫৫ কোটি ডলারের। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রফতানি থেকে ১০৩ কোটি ডলার আয় হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরিতাপের বিষয় বিশ্বমানের কৃষিপণ্য উৎপাদনে ফাইটোস্যানিটারি (উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত) সনদ ও শুড অ্যাগ্রিকালচার প্র্যাকটিস (গ্যাপ) নিশ্চিত করে পণ্য তৈরি করতে না পারায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমাদের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন রাশিয়ায় আলু রফতানির বিশাল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি ফিজির একদল বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে সফর করে আলুর প্রতি আগ্রহী হলেও তাদের ফাইটোস্যানিটারি শর্তাদি পূরণ করতে না পারায় আলু রফতানির সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। উৎপাদিত কৃষিপণ্যে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের বিষক্রিয়া পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবাহান, নাসফের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ, বারসিকের পরিচালক সৈয়দ আলী বিশ্বাস প্রমুখ।