ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর ভোলার উপকূলীয় এলাকার চরাঞ্চলে কমতে শুরু করেছে নোনা পানির জোয়ার। কিন্তু দুর্ভোগ কমেনি ওই এলাকার মানুষের। খাদ্য ও পানযোগ্য পানির অভাবে কষ্টে আছেন তারা।
সমকাল থেকে জানা যায়, ঝড় পরবর্তী তিন দিনেও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চূড়ান্ত করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, ইয়াসের হানায় দ্বীপজেলা ভোলার সাত উপজেলার ৫১ ইউনিয়নের ৬৫৯টি গ্রাম আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ হাজার ৩০৯টি পরিবার। গৃহহারা পরিবারের সংখ্যা তিন হাজার ৫৭৯ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত সাত হাজার ৭৩০ পরিবার। এতে সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ। জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার গরু-মহিষ। নিম্নাঞ্চলের মানুষ সামান্য কিছু শুকনো খাবার পেলেও ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কোনো সহায়তা না পেয়ে হতাশ।
ঝড়ে ঘরবাড়ির পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে গবাদি পশুর। অতিজোয়ারের পানিতে জেলার বিভিন্ন চর থেকে পাঁচ হাজার মহিষ ভেসে গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া নোনা পানির কারণে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নিয়েও তৈরি হয়েছে নতুন শঙ্কা। বুধবারের জলোচ্ছ্বাসে মেঘনা-তেঁতুলিয়াপাড়ের ৫০টি স্থানে প্রায় ১৬ বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক মাছের আড়ত। এতে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওইসব আড়ত ব্যবসায়ীরা। জোয়ারের পানি কিছুটা কমতে শুরু করলে এখনও নোনা পানিমুক্ত হয়নি। আর এতে করে তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে বিশুদ্ধ পানির।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা-তেঁতুলিয়ার জলোচ্ছ্বাস থেকে ভোলাকে রক্ষা করতে রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এর মধ্যে ১১৪ কিলোমিটার বাঁধে স্থায়ী সুরক্ষা থাকলেও বাকি এলাকার নিরাপত্তা মাটির বাঁধের ওপরই নির্ভর করছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মণ্ডল জানান, শনিবার পর্যন্ত তারা ১৩৪টি পশু মারা যাওয়ার খবর পেয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির তালিকার কাজ চলছে। তবে দক্ষিণের চরগুলোতে নোনা পানির কারণে মহিষের বিভিন্ন অসুখ দেখা দিয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন জানান, সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পুনর্নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ টাকা ও ঢেউটিন বরাদ্দ করা হয়েছে। পানিবন্দিদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
ভোক্তাকণ্ঠ/এনএইচ