করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশে চলছে লকডাউন। তবে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সরকার শর্ত সাপেক্ষে শপিংমল-বিপণিবিতান খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঈদের আগে আরেক দফা লকডাউন বাড়তে পারে। তবে এবার সরকার একই সঙ্গে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু করার চিন্তা-ভাবনা করছে।
সবশেষ এক সপ্তাহ মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ৫ মে পর্যন্ত বিধি-নিষেধ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কিন্তু করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা না কমায় বিধি-নিষেধ বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে আবারও।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ভারত ও আমাদের দেশের কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। কমাতে হবে মৃত্যু এবং সংক্রমণ। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিই রাখতে হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে আছি। আগামী দিনগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিধি-নিষেধগুলো মানবো এবং আগামীতে কী অবস্থা তা পর্যবেক্ষণে থাকবে। আমাদের মনে রাখতে হবে জীবন আগে, জীবন বাঁচানারোর জন্য প্রন্তুত থাকতে হবে।
পরিবহণ মালিকরা বলছেন, লকডাউনের মধ্যে সব কিছু খোলা রয়েছে। শুধু গণপরিবহন বন্ধ। এর ফলে করোনার সংক্রমণ কতটা রোধ করা সম্ভব হবে, তা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সবাই তো বাইরে বের হচ্ছেন। কেনাকাটা করছেন। সংক্রমণও দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালুর অনুমতি চান তারা।
ট্রান্স সিল্ভা পরিবহনের ম্যানেজার মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ রেখে দোকানপাট খোলার কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না। সামনে ঈদ আমাদের পরিবার আছে। গতবছর ঈদের সময় খুব কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে পরিবহন শ্রমিকদের। এবারও তার পুনরাবৃত্তি হোক, সেটা চাই না। সরকারের কাছে আবেদন, গণপরিবহন খুলে দেওয়া হোক। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বাস চালাবো।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী গণপরিবহনে সড়ক পথে যাতায়াত করে। করোনা সংক্রমণ রোধে গত ৫ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় দফায় লকডাউনে মালিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ব্যয় কমেনি। কাউন্টার ভাড়া, গ্যারেজ ভাড়া, স্টাফ বেতন, পার্কিং চার্জ, গাড়ি পাহারা ও পার্টস মিলিয়ে দৈনিক প্রত্যেক কোম্পানি বড় অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’
মালিক সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের ওপর মহলের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমরা চাই দোকানপাট-শপিংমল যেভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে, সেভাবে গণপরিবহনও চালু করা হোক।’ পরিবহন মালিকরা সরকারের শর্ত মেনেই পরিবহন চালাতে চান বলেও তিনি জানান।
লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরাও বিড়ম্বনায় পড়েছেন। দোকানপাট খোলা রাখায় তাদের পক্ষে গণপরিবহন চালুর দাবি উঠেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার লকডাউন বাড়ানো হলেও গণপরিবহন সীমিত আকারে চালু রাখা হতে পারে।