নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রতি ঘন মিটার গ্যাসের দাম ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা ৩৫ পয়সা করতে চায় পেট্রোবাংলা। অতি উচ্চমূল্যে স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কেনার তীব্র বিরোধিতা করে এ উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে ক্যাবের পক্ষ থেকে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়।
সোমবার প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তনের লক্ষ্যে গণশুনানির প্রথম দিনের প্রথম অধিবেশনে পেট্রোবাংলা প্রস্তাবিত দরের উপর গণশুনানি সম্পন্ন হয়।
শুনানিতে জানানো হয়, এবার বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম বাসাবাড়িতে ১১৬ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে এবং শিল্প কারখানায় ১১৭ ভাগ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল উদ্বোধনী বক্তব্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ব প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। নতুন করে যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, তাতে এর প্রভাব কঠিনতর হবে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে তা সহনীয় পর্যায়ে রাখার পক্ষে রয়েছে।
এসময় ভোক্তাদের পক্ষ থেকে ক্যাবের প্রধান সমন্বয়ক ও জ্বালানি উপদেষ্টা প্রফেসর ড.এম. শামসুল আলম বলেন, ২০১৯ সালের গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আদেশে দেখা যায়, প্রতি হাজার ঘনফুট এলএনজির গড় ক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে ৯.১৪৯৫ ডলার। সে সময় ভারতে ক্রয়মূল্য ছিল প্রায় ৬ ডলার। অতিতে জ্বালানি তেল ক্রয়ের অভিজ্ঞায় এলএনজি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে ভোক্তাদের সন্দেহ রয়েছে। সময় সুযোগ মত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হলে ক্রয় মূল্য কম হয়, এই ধারণায় আদেশে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি গুরুত্ব পায়। কখন মূল্য কম-বেশী হয়, সে সম্পর্কে পূর্বাভাস পাওয়া অসম্ভব নয়।
‘অভিযোগ রয়েছে, পূর্বে স্পট মার্কেট থেকে কম মূল্যে এলএনজি আমদানির যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, যখন মূল্য সর্বাধিক, তখন আমদানি করা হলো। অথচ এ অভিযোগ আমলে নেয়া হলো না। অতি উচ্চ মূল্যে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ে ভোক্তারা সম্মত কিনা, তা বিবেচনায় আসেনি। বিইআরসি’র মতামতও নেয়া হয়নি। বৈধতার প্রশ্নে এই ক্রয় প্রশ্নবিদ্ধ। তাই স্পট মার্কেট থেকে ক্রয়কৃত এলএনজিজনিত ঘাটতি ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহারে সমন্বয়ে ভোক্তাদের আপত্তি রয়েছে।’
এসময় তিনি আরও বলেন, এলএনজি আমদানিতে অর্থায়ন ও গ্যাসে ভর্তুকি প্রদানের লক্ষ্যে রাজস্ব চাহিদার অতিরিক্ত অর্থে ১.৯.২০২১ তারিখে বিইআরসি জ্বালানী নিরাপত্তা তহবিল গঠিত করে। জুন ২০২১ অবধি এ-তহবিলে মোট ১২,৯১৭.৪৩ কোটি টাকা সংগৃহীত হয়েছে। ব্যয় অনুমোদন হয়েছে ৯,২২৭.৪৪ কোটি টাকা। তন্মধ্যে গ্যাসে ভর্তুকি বরাদ্দ ছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৪২৬.৪৫ কোটি টাকা। এ তহবিলে বছরে সংগৃহীত হয় ২৮৪১ কোটি টাকা। যে পরিমান অর্থ ভর্তুকি দেয়া হয়, তা রাজস্ব চাহিদাভূক্ত হওয়ায় ভোক্তাকে প্রায় ১.৪ গুণ বেশী পরিশোধ করতে হয়। ভর্তুকির নামে এও এক অভিনব লুণ্ঠন।
ভোক্তার পক্ষে কমিশনের নিকট ক্যাবের পাঁচটি সুপারিশ রেখেছে।
ভোক্তা পক্ষে ক্যাবের সুপারিশসমূহঃ
(ক) গ্যাসের বিদ্যমান মূল্যহার বহাল রেখে সকল পর্যায়ের ট্যাক্স-ভ্যাট, লাইসেন্সীদের মুনাফা এবং অযৌক্তিক (লুণ্ঠনমূলক) ব্যয় কমিয়ে গ্যাসে আর্থিক ঘাটতি কমানোর প্রস্তাব করা হলো।
(খ) গ্যাস চুরি ও পরিমাপে কারচুপি এবং অস্বাভাবিক ব্যয়ে চাহিদার অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে ভোক্তাদের নিকট থেকে অর্থ লুণ্ঠন হচ্ছে। তার জন্য পেট্রোবাংলাসহ গ্যাস সরবরাহে নিয়োজিত সকল কোম্পানীর স্ব-স্ব পরিচালনা বোর্ডকে অভিযুক্ত করা হলো। এই অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সকল লাইসেন্সীর মুনাফা মার্জিন রহিত করে ব্রেক-ইভেনে চলার আদেশ প্রদানের প্রস্তাব করা হলো।
(গ) গ্যাস খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য অংশীজনদের প্রতিনিাধদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিশন গঠন করার প্রস্তাব করা হলো।
(ঘ) ইতোপূর্বে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আদেশসমূহে প্রদত্ত বিইআরসি’র আদেশাবলী পালন না করার দায়ে এবং গ্যাস খাত বিপর্যস্ত করার জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সীদের বিরুদ্ধে বিইআরসি আইনের ৪৩ ধারা এবং ৪৬ ধারা মতে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করা হলো।
(ঙ) গ্যাস সেবাকে স্বার্থ সংঘাত মুক্ত করার লক্ষ্যে, গ্যাস সেবা প্রদানকারী লাইসেন্সীদের পরিচালনা বোর্ডকে আমলা মুক্ত করার প্রস্তাব করা হলো, এ-প্রস্তাব গণশুনানীর প্রস্তাব হিসেবে সরকারের নিকট প্রেরণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রস্তাব কর হলো।
আরইউ