প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়াতে তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। জ্বালানি বিভাগের সম্মতিতে এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ কাজ শুরু করেছে সংস্থাটির অপারেশন শাখা। এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। সরকারপ্রধানের অনুমোদন পেলেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) সেই প্রস্তাব পাঠাবে পেট্রোবাংলা।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে ৩০ জুন গ্যাসের দাম ৩২ শতাংশের মতো বাড়িয়েছিল বিইআরসি, যা ওই বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে দ্রুত গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। অন্তত চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশীয় উত্তোলিত গ্যাস এবং আমদানিকৃত এলএনজি মিলে গড়ে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অন্তত ৫০০ নতুন কারখানা গ্যাস সংযোগের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। কয়েক হাজার শিল্প কারখানা গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা পূরণ বা লোড বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে রেখেছে। কিন্তু জোগান না থাকায় বিতরণ কোম্পানিগুলো থেকে নানা শর্ত দিয়ে গ্যাস সংযোগ এবং লোড বৃদ্ধির বিষয়ে ধীরে চলো নীতি অবলম্বর করেছে। শিল্প গ্রাহকরা চাইলেই সহজে গ্যাস সংযোগ বা লোড বৃদ্ধি করতে পারছেন না। এ ছাড়া হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও পর্যাপ্ত গ্যাসের অভাবে পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩০ জুন প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম আবাসিক খাতে দুই চুলার খরচ ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা আর এক চুলার খরচ ৭৫০ টাকার পরিবর্তে ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবাসিক খাতে মিটারে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটারে ১২ টাকা ৬০ পয়সা করা হয়। সিএনজি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা এবং বিদ্যুৎ ও সার কারখানার জন্য ৪ টাকা ৪৫ পয়সা। বাণিজিক্য খাতে প্রতি ঘনমিটার ২৩ টাকা, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্যাপটিভ খাতে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা, শিল্প ও চা বাগানে ১০ টাকা ৭০ পয়সা, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে ১৭ টাকা ০৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
নতুন করে দাম বাড়ানোর তৎপরতা প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ গ্যাসের পাশাপাশি লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত গ্যাস উৎপাদনে খরচ বাড়ছে, একই সঙ্গে দেশে শিল্পায়নের বিকাশ হওয়ায় এর চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার বিশ্ববাজারে এলএনজির দামও অব্যাহতভাবে বাড়ছে। চাহিদা থাকায় ক্রমন্বয়ে এলএনজি আমদানি বাড়াতে হচ্ছে। অদূর ভবিষতে আমদানি আরও বাড়াতে হবে। তাই বর্ধিত গ্যাসের চাহিদা পূরণ অব্যাহত রাখতে সময়োপোযোগী দাম সমন্বয় করা জরুরি।’
এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বেড়েছে ব্যাপক আকারে। সেই সঙ্গে এক ধরনের সংকটও চলছে। আর বাংলাদেশের জ্বালানি ব্যবস্থা আমদানিনির্ভর হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে বেশ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে জ্বালানির দাম ওঠা-নামা পর্যবেক্ষণ করছি। যতক্ষণ পারা যায়, দাম না বাড়িয়ে জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখার চেষ্টা চলবে। তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়তি থাকলে অভ্যন্তরীণ মূল্য সমন্বয় করতেই হবে।’
সচিব আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম অব্যাহত থাকায় এ খাতে সরকারে ভর্তুকির পরিমাণও বাড়ছে দিন দিন। ইতোমধ্যে জ্বালানি বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম অনেক বেশি। এ দাম অব্যাহত থাকলে অনেক বেশি ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে।’